ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

রামু সরকারি কলেজ

এবার অধ্যক্ষের কক্ষে নারী শিক্ষককে মারতে তেড়ে গেলেন প্রভাষক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
এবার অধ্যক্ষের কক্ষে নারী শিক্ষককে মারতে তেড়ে গেলেন প্রভাষক

কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজের শনির দশা যেন কাটছেই না। এবার কলেজের অধ্যক্ষ ও একাধিক সিনিয়র শিক্ষকের সামনে আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকতার জাহান কাকলীকে মারতে তেড়ে গেলেন কলেজটির বাংলা বিভাগের প্রভাষক ও অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ হোছাইন।

এ সময় হোছাইন দফায় দফায় ওই নারী শিক্ষককে মারতে তার দিকে তেড়ে যান। এক পর্যায়ে শারীরিকভাবে আঘাত করতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষের কক্ষের দেওয়ালে একাধিকবার লাথি ও মাথা টোকান বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকরা।

 বুধবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক আকতার জাহান ওই দিন রাতেই রামু থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।  

বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অহিদুল কবির বাংলানিউজকে জানান, এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে তাই আইসিটি বিভাগের খাতার নম্বর ইনপুট দেওয়ার জন্য আকতার জাহান ম্যাডামকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে আনা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই দেখি মোহাম্মদ হোছাইন আসেন। এ সময় আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুজনের মধ্যে খুব উচ্চবাচ্য শুরু হয়। এক পর্যায়ে হোছাইন ম্যাডামকে মারতে কয়েকবার তেড়ে আসেন। এ সময় আমরা তাকে নিবৃত্ত করি। এ সময় হোছাইন উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষের কক্ষের দেওয়ালে দুটি লাথি মারেন একই সঙ্গে মাথাও টোকান এবং গালিগালাজ করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক আকতার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ আসছে। ওইদিন এটিএন নিউজের সাংবাদিক আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন। এ সময় হোছাইন পাশ থেকে উস্কানিমূলক নানা কথাবার্তা বলতে থাকেন। এটা নিয়ে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ আমাকে ডেকে পাঠালে সেখানে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর হোছাইন অধ্যক্ষের সামনেই আমাকে মারতে তেড়ে আসেন। মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ সময় হোছাইন ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষের কক্ষের দেয়ালে লাথি মারাতে থাকেন। আমি এ সময় তার ছবিও তুলেছি।

তদন্ত কমিটি হওয়ার পরেও কেন জিডি করেছেন জানতে চাইলে আকতার জাহান বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। এসব অনিয়মের মূল হোতা এ হোছাইন। যেহেতু হোছাইন অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠজন, তাই এ ঘটনার সঠিক বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় আমি এটা করেছি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন বলেন, টেলিভিশনের সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আমি উস্কানিমূলক কথা কেন বলেছি, এ অজুহাতে গালিগালাজ শুরু করেন আকতার জাহান। এরপর আমি ইমোশনাল হয়ে কান্না করি।

এরপর আমি অধ্যক্ষের কক্ষে গেলে সেখানেও আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন তিনি। আমাকে গ্লাস দিয়ে মারতে ওঠেন আকতার জাহান। আমি দুঃখে দেওয়ালে মাথা মারি। এ ঘটনায় তিনি নিজেও থানায় জিডি করেন বলেও জানান মোহাম্মদ হোছাইন।

কলেজের কয়েকজন সাধারণ শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন। সম্প্রতি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসা নানা অনিয়ম দুর্নীতির প্রধান হোতা হোছাইন। তার সহযোগিতায় অধ্যক্ষ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। কলেজের কিছু কিছু শিক্ষক এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে তাদের হোছাইন নানাভাবে বিষোদগার করেন।

তারা আরও বলেন, অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠজন হওয়াতে হোছাইন কলেজের সিনিয়র জুনিয়র অনেক শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।

তবে হোছাইনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করেছেন রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম।

তিনি বলেন, হোছাইন আমার সামনেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। শিক্ষকরা তাকে নিবৃত্ত করেছেন। এ ঘটনায় কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাহাব উদ্দিনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে কলেজটির অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ‘ভুয়া প্রকল্প-বিনা রশিদে ‘অধ্যক্ষের পকেটে’ কোটি টাকা’ ও ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ’ এবং ‘৫ বছর পরে এলো রামু কলেজে সরকারি নিয়মে বেতন-ফি আদায়ের ঘোষণা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
এসবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।