ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

আবারও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা শুরু

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২১
আবারও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা শুরু

কক্সবাজার: প্রায় এক সপ্তাহের আগে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা শুরু হয়েছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২৩ জুলাই (শুক্রবার) মধ্যরাতে সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়।

কিন্তু এ সময় ভারী বর্ষণ এবং সাগরে সিগন্যাল থাকাতে মাছ ধরতে যেতে পারেনি বেশিরভাগ ট্রলার।
    
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতেন। এ কারণে রাত ১২টার পর থেকেই সাগর মোহনার নদনদীগুলোতে দেখা যেত সাগরমুখী ট্রলারের সারি।  কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় আরো এক সপ্তাহের বেশি সময় জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেনি। তবে তীব্র ও প্রায় টানা বর্ষণ সত্ত্বেও গত দুইদিন ধরে সাগরের আবহাওয়া শান্ত থাকায় কক্সবাজারের জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছে।  

তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে গেছে। বৃষ্টি কমে এলে বাকি ট্রলারগুলোও সাগরে মাছ ধরতে যাবে বলে আশা করেন তিনি।  

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মতে, কক্সবাজারে ছোট বড় প্রায় ৭ হাজার যান্ত্রিক নৌযান সাগরে মাছ ধরে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে।

ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে। যে কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। কক্সবাজার জেলার লক্ষাধিক জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষভাবে সাগরে মাছ ধরা পেশার ওপর নির্ভরশীল।

এদিকে সাগরে মাছ ধরা শুরু হওয়ায় কক্সবাজারের বরফকলগুলোও আড়াই মাস পর পুনরায় চালু হয়েছে। তবে, সাগর থেকে মাছ ধরে ট্রলারগুলো ঘাটে ফেরার পরই শহরের ফিশারীঘাটস্থ প্রধান মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে মাছের বিকিকিনি শুরু হবে বলে জানান ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।  

তিনি জানান, মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে মৎস্য অবতরণকেন্দ্র প্রতিবছর আড়াই মাসের কাছাকাছি বন্ধ থাকে। কারণ সাগরে মাছ ধরা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ থেকে পক্ষকাল পরই ট্রলারগুলো মাছ ধরে মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে আসে।  আর এবার মাছ ধরা শুরু হয়েছে নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ারও ৮/১০ দিন পর। তার মানে এবার প্রায় ৩ মাসের কাছাকাছি মাছের বিকিকিনি বন্ধ থাকছে। আবার অক্টোবরের বন্ধে আরো এক মাস মিলে প্রতি বছর ৪ মাস সময় বন্ধ থাকছে মৎস্য ব্যবসা।  

প্রসঙ্গত সাগরে মাছের প্রাচুর্য বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে।  

এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে, ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তিকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান বলেন, প্রজননকালে বঙ্গোপসাগর উপকূলে মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পেলে এর সুফল জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা পাবেন। ফলে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাময়িকভাবে কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা পুষিয়ে যাবে।   

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা গত ২০ মে (বুধবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে শুরু হয় এবং গত ২৩ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হয়। তবে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এবার নির্ধারিত সময়ে মাছ ধরতে যেতে পারেননি জেলেরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২১
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।