ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

আলু সংকটে পাইকার বাজার, ফের দাম বাড়ার শঙ্কা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০
আলু সংকটে পাইকার বাজার, ফের দাম বাড়ার শঙ্কা

ঢাকা: আলু নিয়ে কারসাজি তৈরি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্য বেধে দিয়েছে ১২ অক্টোবর (সোমবার)। আর এতেই বেঁকে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।

সরকারি মূল্যের এক সপ্তাহ পার হতে চললেও সোমবারও (১৯ অক্টোবর) সেই নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না খুচরা, পাইকারি কিংবা কোল্ডস্টোরেজে।  

নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করলে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়তে হবে, এমন শঙ্কায় কোল্ডস্টোর থেকে আলু ছাড়া হচ্ছে না। সেখানে থেকে আলু না আসায় রাজধানীর পাইকার বাজারের সব আড়তেই ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে আলুর মজুদ।

অন্যদিকে খুচরা বাজারেও রয়েছে আলুর সংকট। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবার) মধ্যে পাইকার বাজার থেকে আলু সংগ্রহ করতে না পারলে তাদের মজুদও শেষ হবে। এমন অবস্থায় আবারও দাম বাড়তে পারে এমনটা শঙ্কা ক্রেতাসাধারণের।

তবে কয়েকদিনের মধ্যেই সব সমস্যার সমাধান আসতে পারে, এমন আশ্বাস দিলেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডেপুটি পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।  তার মতে, কোল্ডস্টোর থেকে আলু না ছাড়লে নিলাম বা সিলগালা করার সুযোগ রয়েছে।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিদরে। আর পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজিদরে। যদিও ২২টি আড়তে মধ্যে মাত্র তিনটিতে আলু রয়েছে তাও আবার পর্যাপ্ত না।

আলু ব্যবসায়ীরা (আড়তদার) বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করলে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের। তাই সরকারি দাম পুর্নবিবেচনা করে ৩৫ টাকা করারও প্রড্তাব অনেক ব্যবসায়ীর।

আড়তদাররা বলছেন, মুন্সিগঞ্জ জেলায় কোল্ডস্টোর পর্যায়ে আলুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা, যেটা আড়তে আসতে আরও দুই টাকা খরচ পড়বে। আমি বেশি দামে বিক্রি করলে জরিমানা গুনতে হবে।  আবার দাম কম বললে কোল্ডস্টোর থেকে আলু দেয় না। আমরা কী বিক্রি করবো, কোথায় যাবো?

কারওয়ানবাজার আড়তদার আফজাল বাংলানিউজকে বলেন, আলুর দাম পুনঃনির্ধারন করা হলে কোল্ডস্টোর থেকে আলু পাওয়া যাবে। এখন বাজারে আলু নাই হয়তো যাদের আছে তারা আবারও দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন।

তাজুল নামে অপর ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মনে আলুর দাম ৩৫ টাকা নির্ধারন করলে সমাধান হবে। এবার ত্রাণে আলুর ব্যবহার ছিলো, বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে সব মিলে সংকট আছে।

রাজধানীর পাইকার বাজারের মতো অধিকাংশ খুচরা বাজারে আলু সংকট রয়েছে।  

মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা সুমন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দোকানে আলু নেই বললেই চলে, কারওয়ানবাজারেও আলু আজও আসেনি। আগামীকালের মধ্যে আলু বাজারে না এলে আবারও অনেক বেশি দাম বেড়ে যাবে।

শঙ্কা তৈরি হয়েছে ক্রেতাসাধারণের মধ্যেও। তাদের মতে, আলু নৈরাজ্যের সমাধান না হলে মধ্যবিত্তদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।  

রামপুরা বাজারের ক্রেতা তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আলুর দাম আবারও বেড়ে যাওয়া মানে অন্য পণ্যের দামও বাড়বে। আবার মধ্যবিত্তদের চলাচলের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়বে। এ অবস্থার অবসান চাই।

তবে সমস্যার সমাধানে আশার বাণী শোনালেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডেপুটি পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।  

তিনি বলেন, আমরা শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে মনিটরিং করছি। কোমো কোল্ডস্টোরেজ যদি আলু না ছাড়ে তাহলে সেটি সিলগালা করা হবে অথবা নিলামে তোলা হবে, আইনে এটা আছে। তবে আশা করি, সে পর্যন্ত সমস্যা যাবে না, সমাধান হবে। তবে ব্যবসায়ীদের বিক্রি ও কেনার রিসিট রাখতে হবে, দেখাতে হবে।

এর আগে বুধবার (১৪ অক্টোবর) প্রতিকেজি আলুর দাম হিমাগারে ২৩ টাকা, পাইকারিতে ২৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজিদরে বিক্রি নিশ্চিত করতে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।  

একইসঙ্গে উল্লেখিত দামে কোল্ডস্টোরেজ, পাইকারি বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতাসহ তিন পক্ষই যাতে আলু বিক্রি করেন, সেজন্য কঠোর মরিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে ডিসিদের কাছে পাঠানো হয়েছে চিঠি।

চিঠিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় ১ দশমিক ৯ কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায় যে, গত বছর উৎপাদিত মোট আলু থেকে প্রায় ৩১ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু পরিমাণ আলু রপ্তানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০
ইএআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।