ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বগুড়ায় ঈদের আগের দিন জমে উঠেছে পশুর হাট

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২০
বগুড়ায় ঈদের আগের দিন জমে উঠেছে পশুর হাট

বগুড়া: বগুড়ায় দু’দিন আগেও তেমন গরু বেচাকেনা হয়নি। তবে ঈদুল আজহার আগের দিন জেলায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট।

চলছে দর কষাকষি ও বেচাকেনা। অল্প সময়ের মধ্যেই কোরবানির পশু কেনার কাজ সারতে হবে। কেন না হাতে আর সময় নেই। একটু দেখে-শুনেই কোরবানির পশু কিনতে চান ক্রেতারা। বগুড়ার হাটগুলোতে মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। তবে দামে ছাড় দিতে নারাজ বিক্রেতারা। আবার দামদরে মিলে গেলেই পশু নিয়ে হাট ছাড়ছেন ক্রেতারা।

শুক্রবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বগুড়া শহরের বনানী এলাকায় অবস্থিত সুলতানগঞ্জ পশুর হাটে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। আর তাই দুপুর ১২টা থেকেই বগুড়ার হাটে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পশুর হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধীরে ধীরে কোরবানির পশু আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাক ভর্তি করে ও হেঁটে নিয়ে আসা পশুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। দুপুর দুইটার মধ্যেই পুরো হাট প্রায় কোরবানির পশু দিয়ে ভরে যায়। বলা চলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে ওঠে কোরবানির পশুর হাটটি।

সরেজমিনে সুলতানগঞ্জ পশুর হাটে দেখা যায়, হাটের প্রধান ফটক দিয়ে হাটের ভেতরে প্রবেশ করে কিছু দূর যেতেই অসংখ্য গরুর মধ্যে দেখা মিললো বেশ কয়েকটি বড় আকারের ষাঁড়ের। এ স্থানে হাটের বড় বড় ষাঁড়ের বেচাকেনা হয়ে থাকে। ষাঁড়গুলোর মালিকরা দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ষাঁড়গুলো দেখতে ভিড় করছেন ক্রেতারাও। কেউ কেউ পছন্দের গরুটি মন দিয়ে দেখছিলেন। আর ক্রেতার দাম শুনে গরুর বেপারীরা একটু বিপাকেই পরেছেন। তাই অনেকেই খুব সামান্য লাভেই তাদের পশুটি বিক্রি করতে চাচ্ছেন।

ফ্রিজিয়ান জাতের দু’টি ষাঁড়ের মালিক আনছার মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তার প্রতিটি ষাঁড়ের দাম চাওয়া হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। দুই লাখ ১০ হাজার টাকা দাম উঠেছে। তবে দুই লাখ ৮০ হাজার হলে ছেড়ে দেবেন তিনি।

হাটে মাঝারি আকারের চারটি ষাঁড় নিয়ে আসা বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আমজাদ মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, এ বছর তার বাড়িতে সাতটি মাঝারি আকারের ষাঁড় লালন পালন করেছেন তিনি। গত মঙ্গলবার বগুড়ার তরনীর হাটে তিনটি ষাঁড় বিক্রি করেছেন। বাকি চারটি নিয়ে এ হাটে এসেছেন। তার ষাঁড়ের দাম চাওয়া হয়েছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে সামান্য লাভে তার ষাঁড়গুলো বিক্রি করে দেবেন বলেও জানান তিনি।  

তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত দু’জন ক্রেতা তার ষাঁড়গুলোর দাম করেছেন। এরমধ্যে বড় দু’টির দাম একজন ৭৫ হাজার ও অপর জন ৯০ হাজার টাকা বলেছেন। হাটে আসা বেশিরভাগ ক্রেতার চাহিদার শীর্ষে রয়েছে মাঝারি আকারের গরু এমন মন্তব্যও করেন তিনি।  

সালেহ, রমজান আলী, কামরুজ্জামান, সোবহান নামে কয়েকজন ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, হাটে প্রবেশ করার পরপরই সাধারণ ক্রেতারা মাঝারি আকারের গরুর দিকেই ছুটে যান। হাটে আসা বেশির ভাগ ক্রেতারই বাজেট ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে। আবার অনেক ক্রেতাই ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে কোরবানির পশু কিনতে হাটের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ঘুরাঘুরি করছেন।

তারা জানান, মাঝারি আকারের গরুর প্রতি ক্রেতাদের বেশি ঝোঁক থাকায় বিক্রেতারা অনেকটা সুযোগ নিচ্ছেন। ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন। ফলে কোরবানির পশু কিনতে ব্যাপক দরদাম করতে হচ্ছে।

এদিকে করোনাকালে বগুড়ায় পশুর হাটগুলোতে সামাজিক দুরত্বের কোনো বালাই নেই। হাটগুলোর বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হলেও তা মানছেন না কেউই। ক্রেতাদের অনেকেই হাটের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছেন আর পশুর দাম করছেন।

এ বছর বগুড়ায় গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার রোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। খামারি ও পশু পালনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪০ হাজার ৮০৯ জন খামারি মোট ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৭৭টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করেছেন।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০ হাজার ৫০৩টি, গাবতলীতে ৩১ হাজার ৪৪৫টি, সারিয়াকান্দিতে ৩৪ হাজার ৫৫৭টি, সোনাতলায় ২৫ হাজার ৭৪৭টি, শিবগঞ্জে ৪১ হাজার ৪৩টি, কাহালুতে ২৬ হাজার ৫৭৮টি, দুপচাঁচিয়ায় ৩০ হাজার ১৬৪টি, আদমদীঘিতে ২৫ হাজার ৮১২টি, নন্দীগ্রামে ২২ হাজার ২৭২টি, শেরপুরে ৩৯ হাজার ৯৫০টি, ধুনটে ৩২ হাজার ৫৮৮টি এবং শাজাহানপুর উপজেলায় ২৫ হাজার ৯১৮টি।

এ পশুগুলোর মধ্যে গরু (ষাঁড়, বদল ও গাভী) ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৫২টি, মহিষ ২ হাজার ৮১৩টি, ছাগল ১ লাখ ৩ হাজার ২৫২টি এবং ভেড়া ১৯ হাজার ৬৬০টি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির হাট শুরুর আগে থেকেই চিন্তিত ছিলেন খামারিরা। জেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ৩৮টির মতো এবং অস্থায়ী আরও ৪০টি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ পর্যায়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশুগুলো বিক্রি চলছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট পরিচালনার জন্য হাট ইজারাদারদের বার বার সচেতন করা হয়েছে।

জেলার কোরবানিযোগ্য ছোট-বড় গবাদি পশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসছে এমন মন্তব্যও করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২০
কেইউএ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।