ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

গরুর হাটেও হচ্ছে ডিজিটাল লেনদেন

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
গরুর হাটেও হচ্ছে ডিজিটাল লেনদেন প্রতীকী ছবি

ঢাকা: নগদ টাকা বহনে চুরি, ডকাতি ও ছিনতাইয়ের পাশাপাশি এর সংস্পর্শে রয়েছে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। তাই মানুষ যতটুকু সম্ভব নগদ টাকা বহন এড়িয়ে চলে নির্ভর করছেন মোবাইল ব্যাংকিংসহ ব্যাংকগুলোর অ্যাপসভিত্তিক সুবিধাগুলোর ওপর।

লেনদেনের এ আধুনিক ধরন ধীরগতিতে জনপ্রিয় হচ্ছিল দেশে। তবে, মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ডিজিটাল পেমেন্ট সেবার যুগান্তকারী এ পরিবর্তন তরান্বিত করেছে।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই অনলাইনে কেনাকাটার পাশাপাশি লেনদেনও বেশ ভালো হয়েছে। এবারের কোরবানির গরুর হাটেও ডিজিটালি লেনদেন হচ্ছে। তবে অনলাইনে পেমেন্ট গেটওয়েতে পেমেন্ট নয়, চলছে ফান্ড ট্রান্সফার।

হাটে গিয়ে গরু পছন্দ করে দর দাম চূড়ান্ত হওয়ার পরে দামের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরাসরি ব্যাপারীর ব্যাংক হিসাবে। ক্রেতার হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অ্যাপস ব্যবহার করে যে কোনো ব্যাংকের হিসাবে ট্রান্সফার করে দেওয়া হচ্ছে টাকা।

নগদ টাকা ছাড়াই রাজধানীর নতুন বাজার হাট থেকে গরু কিনেছেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান খান।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি গরু পছন্দ হয়েছে। প্রথমে যে গরুটি দেখেছি দামও সাধ্যের মধ্যে তবে ব্যাপারীর কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় তার গরুটি নিতে পারিনি। পরে আরেকজনের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকায় একটি গরু কিনেছি। দরদাম চূড়ান্ত করে ব্যাপারীর ব্যাংক হিসাবে টাকা ট্রান্সফার করেছি।

নতুন বাজার হাটের গরু ব্যবসায়ী আজাহার আলী বলেন, আমরাও হাটে নগদ টাকা নিয়ে বেচাকেনা করতে ভয়ে থাকি। জাল টাকা, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য ছাড়াও বাড়ি ফেরার সময় ডাকাতির ভয় তো আছে। যে কারণে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেই টাকা জমা হলে গরু নিয়ে নেয়।

আজাহার আলী বলেন, এবছর ১২টি গরু নিয়ে এসেছি। আটটা বিক্রি করেছি। ৫টি গরুর টাকাই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন ক্রেতারা।

এ বিষয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি গ্রাহক যাতে শাখায় না এসেও সেবা গ্রহণ করতে পারেন। তার জন্য প্রযুক্তি উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। করোনা ভাইরাসের সময়ে প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেন আমাদের এ বিষয়ে উৎসাহী করেছে।

ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার থেকে শুরু করে মুদি দোকানের কেনাকাটা ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে এটিএম কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে ধীরে ধীরে হলেও বাংলাদেশে ডিজিটাল পেমেন্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ব্যাংকারদের মতে অ্যাপ ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাংকিং অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসের চেয়ে দ্রুত গতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই সাফল্য ব্যাংকগুলোকে অ্যাপস চালু করতে উৎসাহ দিয়েছে। কারণ অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহক কেবল একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ৮০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা ২৮ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা বেড়েছে।

মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, মানুষ এখন ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে লেনদেন করতে চায় না। তারপরে আবার শুরু হয়েছে করোনা মহামারি। যেখানে টাকার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারণে মানুষ যতটা সম্ভব নগদ টাকার ব্যবহার এড়িয়ে চলছে। যে কারণে গরুর হাটেও ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ফান্ড ট্রান্সফার হচ্ছে। যেটা ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার জন্য একধাপ অগ্রগতি। এই সময়ে অনেক বেশি ডিজিটাল লেনদেন করছে মানুষ যা নিয়ে আমরা আশাবাদী।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় সিটি করপোরেশনের অনুমোদনে ১৮টি পশুর হাট বসানো হয়েছে। প্রতিটি হাটেই গরুর ব্যাপারীদের ব্যাংক হিসাবে ফান্ড ট্রান্সফার করছেন ক্রেতারা। এছাড়াও সবগুলো হাটেই জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ বসিয়ে ব্যাংকগুলো। শাখা খোলা থাকছে রাত আটটা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
এসই/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।