ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

খুলনার চুই ঝালের কদর দেশজুড়ে

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
খুলনার চুই ঝালের কদর দেশজুড়ে লতাজাতীয় গাছ চুই। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনা অঞ্চলের চুইঝাল বিখ্যাত। লতাজাতীয় এই গাছ এখন বেশকিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে।

যে কারণে খুলনার চুই ঝালের কদর এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে চুই ঝালের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। অনলাইন থেকেও কেনা যাচ্ছে খুলনাঞ্চলের চুই ঝাল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে চুইয়ের আবাদ এবং বাজার রমরমা। শুকনো এবং কাঁচা উভয় অবস্থায় চুই বিক্রি হয়। চুইয়ের জনপ্রিয়তা আর গ্রহণ যোগ্যতার কারণে দেশ-বিদেশে চুইঝাল বা চুই হোটেল নামে অগণিত হোটেল রেস্তোরাঁর নামকরণ করা হয়েছে। এসব হোটেলে চুইসমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করা হয়। ভোজনবিলাসীরা সবাই খেয়ে রসনা তৃপ্তি মেটান।  

চুই গাছের ভেষজগুণ অসামান্য এবং বিস্তৃত। পেটেরপীড়া সারানো, ক্ষুধামন্দা, রুচি বাড়ানো, পেটের গ্যাস নিবারণ, শ্বাসকষ্ট-কাশি, ডায়রিয়া কমানো, ঘুম বাড়ানো, শারীরিক দুর্বলতা কমাতে, বাচ্চাপ্রসবের পর শরীরের ব্যথা কমানোর জন্য অব্যার্থ মহৌষধ হিসেবে চুইঝাল কাজ করে।  

লতাজাতীয় গাছ চুই।  ছবি: বাংলানিউজমাংসের স্বাদ বাড়ানোর জন্য চুই ঝাল ব্যবহারের প্রচলন যুগ যুগ ধরে। যে কারণে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চুই ঝালের দাম বেড়ে গেছে। খুলনার সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিকভাবে চুই ঝালের চাষ হয় শস্য ভাণ্ডারখ্যাত উপজেলা ডুমুরিয়ায়।  

এ উপজেলার রাজিবপুর গ্রামের চুই চাষি এলাহী গাজী মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, এবার কোরবানির ঈদে চুই ঝালের ব্যাপক চাহিদা। পাইকাররা ৪শ টাকা কেজি দরে চুই ঝাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে মাটির তলের চুই ঝাল ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করি।

চুইঝালের জন্য বিখ্যাত খুলনায় এবারের কোরবানির বাজারে এ মসলাটির দাম কিছুটা বেড়েছে। মাস খানের আগে যে চুই ঝালের কেজি ছিলো ৫শ টাকা সেটি এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬শ টাকায়। আর ৮শ টাকার টা হাজার টাকায়।  খুলনায় সবচেয়ে বেশি চুই ঝাল পাওয়া যায় বড় বাজার, কেসিসি সন্ধ্যা বাজার ও গল্লামারী বাজারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদে চুইঝালের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এটি শুধু মাংস নয়, তরকারি, ডাল, মাছের সঙ্গেও খাওয়া যায়। খুলনার চুই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

তারা আরও জানান, দক্ষিণাঞ্চলে চুইঝাল একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ মশলা ফসল। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল প্রভৃতি জেলায় চুইঝালের চাষ করা হয়। ভালো মানের চুইঝাল এক হাজার টাকা কেজি।

বড় বাজারের চুইঝাল ব্যবসায়ী শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, চুই ঝাল দেশের অনেক স্থানেই চাষ করা হয়। তবে খুলনার চুই ঝালে স্বাদ ও ঘ্রাণ আলাদা। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে চুই ঝালের বিক্রি বেড়ে গেছে।  

তিনি জানান, ফুলতলা ও দৌলতপুর থেকে তিনি চুইঝাল আনেন। প্রকারভেদে কেজি বিক্রি করছেন ৪শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোরবানি উপলক্ষে বড় বাজার থেকে চুই ঝাল কিনেছেন বলে জানান জিয়াউল হক মিলন নামের এক ক্রেতা।  

তিনি বলেন, খুলনার ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা আসলেই সবার প্রথমে আসে চুই ঝালের কথা। চুই ঝালে গরুর মাংস কিংবা খাসির মাংস, একনামে বিখ্যাত। চুইঝালের সু-ঘ্রাণ মাংসকে করে তোলে অতুলনীয় সুস্বাদু।  যে কারণে কোরবানি আসার আগেই চুই ঝাল কিনে রেখেছি। তবে দাম একটু বাড়তি বলে অভিযোগ করেন তিনি।  

অনলাইনে দেশব্যাপী চুইঝাল সরবরাহ করছে উড়া ও খুলনামার্ট নামের দু’টি প্রতিষ্ঠান। কোরবানি উপলক্ষে তাদেরও বিক্রি বেড়েছে বহুগুণ।  

এ প্রসঙ্গে উড়ার স্বত্ত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম হিরণ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনাঞ্চলের একটি মুখরোচক সুস্বাদু মাংসের মসলা চুই ঝাল। কোরবানির সময় যেটার চাহিদা অনেক গুণ বেড়ে যায়। খুলনার চুই ঝালের সুনাম সুখ্যাতি রয়েছে সারাদেশে। ইতোমধ্যে ঈদ উপলক্ষে দেশের ৫০টিরও অধিক জেলা থেকে খুলনার চুইঝালের অর্ডার পেয়ে সরবরাহ করেছি।  

khulnamart.com.bd এর ফাউন্ডার স্বপ্নীল মাহফুজ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা-যশোর অঞ্চলে মাংস রান্নার এক অন্যতম অনুষঙ্গ চুই ঝাল। গরু কিংবা খাসির মাংসে যেন এক আলাদা স্বাদ এনে দেয় চুই ঝাল। নামেই বোঝা যায় এটি স্বাদে ঝাল, কিন্তু এই ঝাল একটু আলাদা। এর রয়েছে একটি আলাদা গন্ধ যা তরকারি বা রান্না মাংসে আনে আলাদা এক আমেজ। আরও মজার ব্যাপার হলো খাওয়ার পর এই ঝাল বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না অর্থাৎ এটা খেয়ে যদি আপনার ভীষণ ঝাল লেগে যায়, মাত্র কিছুক্ষণ পরেই সেটা চলে যাবে।  

আসন্ন কোরবানি ঈদ উপলক্ষে Khulnamart.com.bd  এর ফেসবুক  পেজেই অর্ডার নেওয়া হচ্ছে চার ক্যাটাগরির চুই ঝাল। ডাল চুই ২শ টাকা কেজি, কাণ্ড চুই ৪শ টাকা কেজি, রেগুলার চুই ৭শ টাকা কেজি, স্পেশাল চুই ১ হাজার টাকা কেজি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।