ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঈদ-আনন্দও তাদের জন্য ‘কষ্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১০
ঈদ-আনন্দও তাদের জন্য ‘কষ্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে

ঢাকা: ঈদকে সামনে রেখে গুলিস্তানসহ আশপাশের রাস্তায় দোকান-পসরা নিয়ে বসা ৫ হাজারেরও বেশি হকার (ক্ষুদে ব্যবসায়ী) এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুক্রবার সংঘর্ষের ঘটনায় ‘পুলিশের উপর হামলা চালানো’র অভিযোগে  পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ও হয়রানি এড়াতে তারা গুলিস্তানের আশপাশেও ভিড়তে সাহস পাচ্ছেন না।



অনেক ফুটপাতের অনেক দোকানির কার্টন বোঝাই পণ্য বিভিন্ন অলিগলি ও অন্যের দোকানে পড়ে আছে। সেগুলো নিয়ে রাস্তায় কেউ পসরা সাজিয়ে বসারও সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে ঈদ-বাজারে তাদের ব্যবসা যেমন মাটি হয়ে গেছে, তেমনি ঈদ-আনন্দও তাদের জন্য ‘কষ্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গোলাপশাহ্ মাজারের পশ্চিম পাশে খুব অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিলেন জয়নাল আবেদীন ভূইয়া (৫৫)। বরগুনার আমতলী থানার লবনগোলা গ্রামে তার বাড়ি। তিনি গুলিস্তান হল সংলগ্ন ফুটপাতে শিশুদের পোশাক বিক্রি করেন। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ব্যবসা করছেন বলে দাবি করেন তিনি। জয়নাল আবেদীন জানান, এবার তার ফুটপাতের জায়গাটুকু হান্নান নামে থানার এক লাইনম্যান অন্য একজনের কাছে বেশি টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। তাই রাস্তায়ই দোকান বসাতে হচ্ছে। শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় জয়নাল আবেদীন ব্বেধড়ক লাঠিচার্জের শিকার হন। তার দোকানের সব মাল লুট হয়ে গেছে।

জয়নালের পাশের দোকানি কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা আজগর আলী মোল্লা (৪৮) বলেন, ‘ঈদটাই তো মাটি হয়ে গেল। ব্যবসা তো দূরে থাক, এখন কোথাও একদণ্ড দাঁড়াতেও পারছি না। পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ’

রাস্তায় দোকান বসানো অপর ব্যবসায়ী ছাত্তার হাজী বলেন, ‘গত ১০/১২ দিনের লাভের টাকায় পজিশন কেনা এবং ভাড়া ও চাঁদার টাকা পরিশোধ করেছি। এখন কিছু বেচাকেনা করে বাড়িঘরের জন্য কেনাকাটা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পুলিশের কারণে আর পারলাম না। ঈদের আনন্দটাও মাটি হয়ে গেল। ’

ঈদকে কেন্দ্র করে রাস্তাজুড়ে দোকানপাট বসানো ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের মাঝে রীতিমতো হাহাকার বিরাজ করছে। গত শুক্রবার পুলিশের উপর হামলা চালানো, ওসির গাড়ি ভাঙচুরসহ নানা বিশৃঙ্খলায় জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকশ’ হকারকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এরই মধ্যে আদালতে পাঠিয়েছে। মামলায় নাম-ঠিকানা চিহ্নিত না করা বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। হয়রানি ও গ্রেপ্তার এড়াতে হকাররা তাই রাস্তা ছেড়ে দিয়েছেন, এমনকি পরিত্যক্ত পণ্যগুলো উদ্ধারের জন্য দোকানের আশপাশেও যেতে পারছেন না।

এদিকে, হকারদের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা অস্বীকার করলেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল হক। তিনি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, সামনে ঈদ হওয়ায় হকারদের গ্রেপ্তারে আপাতত কোনো অভিযান চালানো হচ্ছে না। তারা রাস্তা দখল না করে ফুটপাতকেন্দ্রিক দোকানপাট পরিচালনা করলে তাতে পুলিশ কোনো বাধা দেবে না।

বাংলাদেশ সময় : ১২৫৭ ঘণ্টা, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।