ঢাকা: বাজারদরের চেয়ে বেশি দরে ১ হাজার টন কানাডিয়ান বল্ডার ডাল কিনতে যাচ্ছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বাজারে এ ডালের পাইকারি মূল্য ৬৭.৫০ পয়সা।
এছাড়াও কম দামে সরবরাহ করার প্রস্তাব থাকার পরও বেশি দামে ক্যাঙ্গারু নামের নেপালি ডাল কেনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট অতিউৎসাহী কর্মকর্তারা স্রেফ ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এটা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।
সূত্র জানায়, নিম্নমানের এই ডাল সরবরাহের জন্য কর্ণফুলি পোল্ট্রি সিড ফিড নামের একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এরই মধ্যে টিসিবির চুক্তিও হয়ে গেছে। শিগগিরই এই ডাল সরবরাহ শুরু হবে। অথচ টিসিবির পরিচালক মাহফুজুর রহমান সরকার চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করছেন। তিনি অস্বীকার করলেও চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেছে বলে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর .কম.বিডির কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট ডিলারদের অনেকেই দাবি করেছেন।
পরিচালক মাহফুজুর রহমান সরকার বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কেজি প্রতি কানাডিয়ান ডাল ক্রয়ের জন্য ৭৩ টাকা নির্ধারণ করেছে। এই দামের সাথে ৫ শতাংশ টেক্স ও ১ টাকা করে পরিবহন খরচ ধরা হয়েছে। এটা প্রস্তাবিত, এখনও কোন চুক্তি হয়নি। ’
এদিকে টিসিবিতে নিয়মিত পণ্য সরবরাহকারী সংস্থা বৃষ্টি ইন্টারন্যাশনাল, তাহসিনসহ অন্যান্য সরবরাহকারী সংস্থা নেপালি ক্যাঙ্গারু ডাল ৯৪ টাকা করে কেজি সরবরাহের প্রস্তাব করলেও টিসিবি ১৯০ তেজগাঁও ‘ট্রায়ো হলোগ্রাম’ থেকে ৯৬ টাকা কেজি দরে কিনতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এক্ষেত্রে টিসিবি পরিচালকের ভাগ্নি পরিচয়দানকারী তানিয়া নামের এক মহিলা মধ্যস্ততা করছে বলে সূত্র জানায়।
টিসিবির পরিচালক ৯৬ টাকা দরে নেপালি ডাল কেনার বিষয়টি অসীকার করে বলেন, ৯৫ টাকা দরে ‘গুণগত মানের’ ডাল সরবরাহ করবে এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত নামের তালিকায় ‘ট্রায়ো হলোগ্রাম’ নেই।
তিনি আরও দাবি করেন, তার নিজের কোনো আত্মীয় ব্যবসা বা মধ্যস্থতার সঙ্গে জড়িত নয়। তানিয়া নামে তার কোনো ভাগ্নি নেই ।
এ সম্পর্কে জানতে টিসিবর চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের সঙ্গে প্রথমে দেখা করার এবং পরে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন সেটে ১০/১৫ বার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এ কারণে টিসিবি চেয়ারম্যানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে টিসিবি থেকে নিম্নমানের পণ্য নিয়ে বাজার দর থেকে বেশি দামে বিক্রি করেতে গিয়ে ডিলারা বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন টিসিবির ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুয়েল আহমেদ। তিনি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন,‘আগপাশ না ভেবে লাগামহীনভাবে পণ্য কিনছে টিসিবি । এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। শবে বরাতের আগে ডিলারদের কাছে পণ্য বিক্রি করার কথা থাকলেও অজানা কারণে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয় অনেক পরে-----রোজার আগের দিন।
এদিকে টিসিবি কর্মচারিদের অভিযোগ কিছু অসাধু কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজস করে কম দামের নিম্ন মানের ডাল বেশি দামে কিনে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেবার পাঁয়তারা করেছেন। টিসিবি এরই মধ্যে নিজস্ব ফান্ডের ৫৭ কোটি টাকা শেষ করে ব্যাংক থেকে ৯.৭৫ শতাংশ হারে বাড়তি ৯২ কোটি টাকা টিসিবি গ্রহণ করেছে। ব্যাংক থেকে আরো প্রায় ১০০ কোটি টাকা গ্রহণ করা প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ সময় ১৫৩০ ঘন্টা, আগস্ট ৩১, ২০১০।