ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

নারিকেলে চাঙ্গা লক্ষ্মীপুরের গ্রামীণ অর্থনীতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৮
নারিকেলে চাঙ্গা লক্ষ্মীপুরের গ্রামীণ অর্থনীতি দুই নারিকেল ব্যবসায়ী। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: মেঘনা উপকূলে লক্ষ্মীপুর জেলার অবস্থান। এ জনপদের বেশির ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। এখানকার ভূমিতে সয়াবিন, ধান ও সুপারির পাশাপাশি প্রচুর নারিকেল উৎপাদন হয়। এক বছরে নারিকেল উৎপাদন হয়েছে ৪৬ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১২৫ কোটি টাকা।

গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে নারিকলের চাষ, উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় জীবনযাত্রার মানে গতি এনেছে। কর্মসংস্থানসহ জীবিকা নির্বাহে ভূমিকা রাখছে এ নারিকেল।

উন্নয়ন হয়েছে আর্থ-সামাজিক অবস্থার। এতে চাঙ্গা হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

লক্ষ্মীপুরের এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে অর্থকারী ফসলের গাছ নেই। বাগানে সারি সারি গাছ ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা বসতঘরের আশেপাশে-পুকুরপাড়ে দেশীয় জাতের নারিকেল গাছ দেখা যায়। সারা বছর ধরে ওইসব গাছ থেকে নারিকেল সংগ্রহ করা হয়।

উৎপাদিত নারিকেল পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করা হয় দেশের বাজারে। মুখরোচক নানা পদের সুস্বাদু খাবার তৈরিতে নারিকেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া তেল উৎপাদন ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে নারিকেলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

আরও পড়ুন>>নারিকেলের ছোবড়ায় সৌখিন পণ্য

কৃষি নির্ভর জনপদে কোনো শিল্পকারখানা না থাকায় এখানকার বেশিরভাগ মানুষ জমির ফসল ও বাড়ির আশেপাশে উৎপাদিত নারিকেলের ওপর নির্ভরশীল। এমন অসংখ্য পরিবার আছে যাদের বাড়ির ১৫/২০টি নারিকেল গাছ তাদের সংসার খরচ চালাতে সহায়তা করছে। অপরদিকে, যাদের নারিকেলের বাগান তাদের আয় লাখ লাখ টাকা।

চলতি বছরও এখানে নারিকেলের বাম্পার ফলন হয়েছে। নারিকেল কেনা-বেচায় এখন সরগরম লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাটবাজার। রাস্তার মোড়ে বসেও নারিকেল কেনা-বেচা করছেন অনেকে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারিকেল কিনেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ছাড়াও জেলার বাইরের ব্যবসায়ীরা এসে লক্ষ্মীপুর থেকে নারিকেল কিনছেন। ওইসব নারিকেল নদী ও সড়ক পথে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করেন। প্রতিদিন লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাটবাজারে লাখ লাখ টাকার নারিকেল বিক্রি হয়ে থাকে।

জেলার হাট-বাজারে সাপ্তাহিক দুইদিন হাট বসে। হাটের দিনগুলোতে বিক্রির জন্য নারিকেল উঠানো হয়। নিম্ন আয়ের লোকজন নারিকেল বিক্রি করে প্রয়োজনীয় সদাই কিনে বাড়ি ফিরেন।

নারিকেলের প্রধান মোকামগুলা হলো- সদর উপজেলার দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, রামগঞ্জ শহর, কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট, রামগতির আলেকজান্ডার।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর আনোয়ার উল্লাহ বলেন, তার বাড়িতে ১৫টি নারিকেল গাছ আছে। প্রতিহাটে তিনি নারিকেল বিক্রি করতে পারেন। এভাবে সারা বছর নারিকেল বিক্রির টাকায় তার সংসার চলে।

কমলনগর উপজেলার নারিকেল ব্যবসায়ী মঞ্জুর আলম বলেন, ব্যাপক চাহিদা থাকায় নারিকেল ব্যবসা লাভজনক। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে এ ব্যবসা করছেন। এতে তিনি ব্যবসায়ীকভাবে সফল হয়েছেন।

তবে স্থানীয়ভাবে নারিকেলভিত্তিক কল কারখানা গড়ে না উঠায় ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

আরও পড়ুন>> নারকেলের ছোবড়া ছাড়িয়ে জীবিকা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে নারিকেলের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৪০০, রায়পুরে ৩৭০, রামগঞ্জে ৫২০, রামগতিতে ১৬০ ও কমলনগরে ৩৫০ হেক্টর জমিতে নারিকেল গাছ রয়েছে। জেলায় এক বছরে নারিকেল উৎপাদন হয়েছে ৪৬ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন। যার দাম প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। এছাড়া অন্তত ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার নারিকেলের ছোবড়া বিক্রি হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বলেন, নারিকেল উৎপাদের জন্য লক্ষ্মীপুরের আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী। এখানে নারিকেলের বাম্পার ফলন হয়। ভালা ফলন পেতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।