ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

মাছ ধরার চাঁই বানিয়ে স্বচ্ছলতা আনছেন নারীরা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
মাছ ধরার চাঁই বানিয়ে স্বচ্ছলতা আনছেন নারীরা  মাছ ধরার চাঁই তৈরি করছে নারীরা। ছবি: বাংলানিউজ

মুন্সীগঞ্জ: বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চর রমজানবেগ গ্রামে চলছে বাঁশের শলা দিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে পরিচিত চাঁই তৈরির কাজ। এ শিল্পের বেশিরভাগ কারিগরই হলো নারী। 

সংসার সামলিয়ে ঘরে বসে এসব কাজের মাধ্যমে তারা বাড়তি আয় করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ভূমিকা পালন করছেন।  

একটি মুলি বাঁশ দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার চারটি চাঁই হয়, আর একটি মোড়ল বাঁশ দিয়ে কুঁচে ধরার চাঁই হয় ২৫টি।

পাঁচ ধরনের চাঁই বানানো হয় এই গ্রামে।  

নদী-নালা, খাল-বিল হাওরের সুবিধা মতো স্থানে রেখে মাছ শিকার করা হয়। পানিতে মাছ চলাচল করতে করতে এক সময় চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। চাঁই বানানোর প্রধান কাঁচামাল হলো বাঁশ ও সুতা। মাছ কিংবা কুঁচে ধরার জন্য বিভিন্ন মাপে বাঁশের শলা তুলে এগুলো রোদে শুকিয়ে তারপর শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ। বিভিন্ন ধাপের পর একটি পরিপূর্ণ চাঁই তৈরি হয়। স্থানীয় ও আশপাশের হাটের দিনগুলোতে জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরা নৌযানের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায় এসব চাঁই। তৈরি করে রাখা হয়েছে মাছ ধরার চাঁইচুলায় ভাত বসিয়ে নারীরা পিঁড়িতে বসেই করে চাঁইয়ের বিভিন্ন অংশ তৈরির কাজ। প্রবীণ নারীরা পানের কৌটা পাশে রেখে উঠোনে বসে এ কাজ করেন। ৫-৬ বাড়ির নারীরা ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে এই ব্যবসা করছেন। বাড়ির ভেতরে এখন কাঁচামাল গুছিয়ে রাখছেন তারা। রাস্তার দুই পাশে বাঁশের টুকরো সাজাচ্ছেন।

বর্তমানে এসব কাজে নারীদের অংশগ্রহণের ফলে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরতে শুরু করেছে। বছরের ৬ মাস চর রমজানবেগ গ্রামের প্রতিটি পরিবার চাঁই বানিয়ে থাকে। সরেজমিনে ওই সব এলাকার নারীদের এমন ব্যস্ততা চোখে পড়ে।  

গ্রামের প্রবীণ ব্যবসায়ী আজমির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পৈত্রিক সূত্রে ৩ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা করছি। পরিবারের সদস্যসহ ২০ জন কারিগর জড়িত আছে এ কাজে। এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই চাঁইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে এ অঞ্চলে আলু তোলার ‍কাজ শেষ তাই এসব কাজ শুরু করেছেন তারা। ১০০ চাঁই তৈরি করে ১১০০-১২০০ টাকা পাওয়া যায়।  

মুন্সীগঞ্জসহ বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার মানুষ এখানে চাঁই কিনতে আসেন। হাটের দিনে এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। যদি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ কাজে এগিয়ে আসতো তাহলে আরোও প্রসার ঘটতো এ শিল্পের।  

খোরশেদা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন ২৫টি চাঁই তৈরি করে থাকি এবং প্রত্যেকটির দাম ৪০০-৫০০ টাকা। কতটুকু কাজ শেষ হয়েছে এর উপর নির্ভর করে মজুরি। প্রত্যেকটি অংশ আলাদাভাবে তৈরি হয় তাই মজুরিও ভিন্ন। ঘরে বসে বাড়তি কিছু টাকা আসলে ক্ষতি নেই।  মাছ ধরার চাঁই তৈরি করছে এক ব্যক্তিসোনিয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, স্বামীর নিষেধ সত্ত্বেও চাঁই তৈরি করে আসছি। একটি অংশ তৈরি করে ৬ মাসে ২২ হাজার টাকা আয় করি। ৭-৮ বছর ধরে সংসার সামলিয়ে জড়িত রয়েছি এর সঙ্গে। ঘরে বসে প্রতি বছরই এ কাজ করে কিছু টাকা আয় করি। সামনের ঈদে এসব টাকা পরিবারের জন্য খরচ করবো।  

আট মেয়ের জননী হাজেরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর ৫ জন কিস্তির টাকা তুলে কাজ করছি। মূলি বাঁশের দাম আগে ছিল ২০-২৫ টাকা, বর্তমানে তা ১০০-১২০ টাকা। প্লাস্টিকের সুতো আগে ছিল ৭০ টাকা এখন ২১৫ টাকা। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভও আগের চেয়ে একটু কম হয়।


বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল আলম বাংলানিউজকে জানান, নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই এ বিষয়ে। তবে তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া জাহান বাংলানিউজকে জানান, চাঁই তৈরি শিল্পের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষদের জড়িত থাকার বিষয়টি আমি শুনেছি। এ শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে প্রশাসন থেকে যাবতীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০২১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।