ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

পিডিদের নিয়ে বৈঠক

কংক্রিটে হবে ইউনিয়ন থেকে জেলাসড়ক

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৮
কংক্রিটে হবে ইউনিয়ন থেকে জেলাসড়ক ফাইল ছবি

ঢাকা: ইউনিয়ন পর্যায়ে ভারী যানবাহন চলাচল করে, অথচ এই সড়কগুলো হাল্কা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে নির্মিত। রড, সিমেন্ট, বালিসহ ভারী নির্মাণ সামগ্রীবোঝাই ট্রাক চলাচলের ফলে এসব সড়ক কম সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেলা সড়ক পর্যন্ত কংক্রিটে নির্মাণ করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) সকল প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি)।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত এলজিইডি’র আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়নের অগ্রগতির পর্যালোচনাসভায় এই প্রস্তুতির তাগিদ দেয়া হয়েছে।
 
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে শেরেবাংলানগরে অর্থমন্ত্রণালয়ের এনইসি মিলনায়তনে সভার আয়োজন করা হয়।

বুধবার (০৪ মার্চ) পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) আয়োজিত সভায়  এলজিইডি’র সকল প্রকল্প পরিচালক (পিডি) উপস্থিত ছিলেন। এলজিইডি’র মোট প্রকল্পের সংখ্যা ২৫১টি। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বিটুমিন থেকে বের হয়ে এসে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।
 
এলজিইডি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট বরাদ্দের ব্যয় করেছে ৫৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। এলজিইডি’র মোট বরাদ্দ ২২ হাজার ৭৮৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
 
এটাসহ বৈঠকে মোট সাতটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়। চলতি বছরে বাস্তবায়ন অগ্রগতির তথ্য, জাতীয় পর্যায়ে ৪৫ শতাংশের নীচে বাস্তবায়নাধীন বিষয় নিয়েও বৈঠক হয়। কম অগ্রগতি সম্পন্ন প্রকল্প, প্রকল্প সমূহের সমস্যা নিরসন নিয়েও আলোচনা হয়।
 
এলজিইডির অধীনে রয়েছে উপজেলা, ইউনিয়ন, টাইপ ‘এ’ ও টাইপ ‘বি’ (দুই কিলোমিটার বা এর বেশি দৈর্ঘ্যের) শ্রেণির সড়কের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৭০টি। এসব সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৯ কিলোমিটার। দুই কিলোমিটারের কম দৈর্ঘ্যের টাইপ ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত ৬১ হাজার ৬০৮টি সড়ক এলজিইডির অধীনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসব সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৬৩ হাজার ২৪৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে সারাদেশে অনেক সড়ক বেহাল। মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে। এসব সড়ক মেরামতের দায়িত্বে রয়েছেন পিডি।
 
মানুষের দুর্ভোগ যাতে কমে এবং দ্রুত সময়ে সড়কগুলো মেরামত করা হয় সে নির্দেশই দেয়া হয়েছে পিডি’দের। একই সঙ্গে প্রকল্প এলাকায় পিডি’দের অবস্থান করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ দেয়া হয়েছে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সংক্ষিপ্তসার স্থানীয় প্রকল্প এলাকায় টানিয়ে দেয়ারও।
 
নির্বাচনকে সামনে রেখে পিডি’দের এসব সড়ক দ্রুততম সময়ে মেরামত করার নির্দেশ ও তাগিদ দেয়ার কারণও স্পষ্ট। সামনেই তো নির্বাচন। সারাদেশে হাজার হাজার সড়ক যদি এভাবে বেহাল থাকে তাহলে নির্বাচনে এর একটা চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়াই স্বাভাবিক। তাই সরকার এ বিষয়ে সজাগ। যেসব সড়কের অবস্থা একেবারেই শোচনীয় সেই সব সড়কের সংস্কার ও নির্মাণ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

আইএমইডি সচিব মো. মফিজুল ইসলাম ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এলজিইডি’র সকল পিডি‘দের নিয়ে পর্যালোচনা সভা হয়েছে। কিছু প্রকল্পের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা নিরসনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে মানুষের দুর্ভোগ নিরসন করতে বলা হয়েছে। ’
 
এলজিইডি’র পিডি’দের নিয়ে বৈঠক প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ধূলাবালি-ময়লার উপরেই বিটুমিন ফেলে সড়ক নির্মাণ করা হয়। এটা না করতে পিডি’দের নির্দেশ হয়েছে। ধূলাবালির উপরে বিটুমিন দিলে সূর্যের আলো পড়লেই বিটুমিন উপরে আসতে চায়। সড়ক পরিষ্কার করে বিটুমিন না দিলে টেকসই হবে না। অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ বিটুমিন কেনা হয়, এগুলোতে আবার চট্টগ্রাম মিরেরসরাইয়ে ভেজাল মেশানো হয়। তাই আমরা বলেছি ধীরে ধীরে বিটুমিন ছেড়ে কংক্রিটে যেতে হবে। ইউনিয়ন সড়ক থেকে জেলাসড়ক সবই কংক্রিটে নির্মাণ করতে হবে। একই সঙ্গে মহাসড়কের বাজারগুলোতে কংক্রিট বেজড সড়ক নির্মাণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস একবার কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করলে কমপক্ষে ১০ বছর টেকসই হয়। ’
 
বৈঠক প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়কের ধারণ ক্ষমতা হয়তো আড়াই টন কিন্তু এসব সড়কে ১০ টনের ট্রাক চলাচল করে। তাহলে কীভাবে আর এসব সড়ক টেকসই হবে বা থাকবে। তাই কংক্রিটের সড়ক করতে বলা হয়েছে। কংক্রিটের সড়কের লাইফ টাইম ৫০ বছরের কম নয়। ’
 
তিনি আরও বলেন, সড়ক রক্ষার্থে আমাদের সচেতন হতে হবে। সড়কের উপরে গরু বাঁধা যাবে না সড়ক কেটে ট্রাক্টর নামানো যাবে না। একটা সড়ক পাঁচ বছরের জন্য আমরা নির্মাণ করবো। এর মধ্যে যদি সড়ক নষ্ট হয় তবে দায় স্থানীয়দের। তাহলে দেখা যাবে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয়রাও এগিয়ে আসবেন। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৮ 
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।