ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প

বিদেশি বিনিয়োগে নীতিমালার অভাবে বিপাকে পোল্ট্রি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৭
বিদেশি বিনিয়োগে নীতিমালার অভাবে বিপাকে পোল্ট্রি পোল্ট্রি শিল্প। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: অধিক জনসংখ্যা ও দারিদ্রের কারণে বাংলাদেশে পোল্ট্রি ও পোল্ট্রিজাত পণ্যের চাহিদা বেশি। তাই বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশকেই তাদের বিনিয়োগের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে।

কিন্তু বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারবে, স্থানীয় উদ্যোক্তা সঙ্গে নেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা আছে  কি না, কিংবা বিনিয়োগের কতো শতাংশ লভ্যাংশ নিয়ে যেতে পারবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে তাই বিদেশি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য।


 
বর্তমানে ৭টি বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের ব্যবসা করছে। এগুলো হলো- ভিএইচ গ্রুপ, গোদরেজ, সেগুনা, টাটা, অমৃত গ্রুপ, সিপি এবং নিউ হোপ। এসব  কোম্পানি এরই মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পের ৪০ শতাংশের বেশি বাজার দখল করে নিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছে দেশীয় উদ্যোক্তারা।
 
সাভার রপ্তানি শিল্পাঞ্চলে শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী টেক্সটাইল,গার্মেন্টস, লেদার ইত্যাদি শিল্পে বিনিয়োগ করছে। এখানে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা আছে। কিন্তু পোল্ট্রি শিল্পে বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। তাই অন্যান্য শিল্পের মতোই এই শিল্পেও বিনিয়োগকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নীতিমালা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
 
বিদেশি কোম্পানিগুলো সরকারকে ভোক্তা পর্যায়ে পোল্ট্রি ও পোল্ট্রি সামগ্রী মূল্য স্থিতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এদেশে বিনিয়োগ শুরু করে। অন্যদিকে বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় বিদেশি কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে কৃত্রিম লোকসান সৃষ্টি করছে। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বড় ও মাঝারি খামারগুলোও ক্রমশ তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।
 
পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত পুঁজির স্বল্পতা, অভিজ্ঞ জনবল, প্রযুক্তির ব্যবহার ও কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষে যে কোনো দেশ বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে পোল্ট্রি শিল্পে কোনো কিছুরই ঘাটতি নেই। এরপরও সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু তাদের তদারকির অভাবে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে বাজার হারাচ্ছে।
 
বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে ১৯৯৯ সালে বিদেশি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করা শুরু করে। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছরেও বিদেশি কোম্পানিগুলোর ব্যবসার জন্য সরকার কোনো নীতিমালা প্রনয়ণ করেনি।  
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পোল্ট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। বিদেশি কোম্পানিগুলো পোল্ট্রি শিল্পে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করবে তার কোনো নীতিমালা আছে বলে আমার জানা নেই। নীতিমালা যদি থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই তারা কণ্ট্রোলে থাকতো। নীতিমালা থাকলে জবাবদিহিতা থাকে। কিন্তু বিদেশি কোম্পানিগুলো একটা কাজ করতে এসে এখন সবকিছু করছে। কোনো কিছুর তদারকি নেই। ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলো যা খুশি তাই করছে। কিন্তু আমরা দেশের নাগরিক হয়েও সবকিছু করতে পারছি না।  
 
পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে ব্যবসা করবে তার কোনো নীতমালা আছে কিনা জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা করতে বিনিয়োগ বোর্ড থেকে ব্যবসা করার অনুমতি নিয়ে আমাদের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আসে। তবে তারা কতো বিনিয়োগ করতে পারবে কিংবা কি পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়ে যেতে পারবে সেটার বিষয়ে কোনো নীতিমালা আছে কিনা তা জানি না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে।
 
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে ব্যবসা করার অনুমতি আছে। তবে তারা কি পরিমাণ বিনিয়োগ করবে বা মুনাফা নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে তার কোনো নীতিমালা আছে বলে জানা নেই। আমরা দেশীয় শিল্প রক্ষায় বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। আশা করি দ্রুতই এর সমাধান আসবে।    
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০,২০১৭
এসজে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।