ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

আদমজী বন্ধের ৯ বছর: এইপিজেডে ফিরছে কর্মচাঞ্চল্য

তানভীর হোসেন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১১
আদমজী বন্ধের ৯ বছর: এইপিজেডে ফিরছে কর্মচাঞ্চল্য

নারায়ণগঞ্জ: অব্যাহত লোকসানের কারণে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলস বন্ধ করা হলেও আবারও প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শ্রম জনপদ। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে আদমজী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (এইপিজেড)।



৩০ জুন বৃহস্পতিবার আদমজী বন্ধের ৯ বছর পূর্তি হলো।

২০০২ সালের এই দিনে বন্ধ করে দেওয়া আদমজী জুট মিল ২০০৬ সালের ৬ মার্চ এইপিজেড হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

এইপিজেড পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে এখানে কমপক্ষে ৬০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছেন এর অবকাঠামো উন্নয়নকাজের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (বেপজা) কর্তৃপক্ষ।

ইপিজেডের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশি-বিদেশি ২৩টি কারখানা এইপিজেডে উৎপাদন শুরু করেছে। এসব কারখানায় রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসামগ্রী, তৈরি পোশাক, জুতা, ইলেকট্রিক ক্যাবলস, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকসামগ্রী উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৫ হাজার ৫১৭ শ্রমিক কাজ করছেন।

তবে ২৩টি কারখানার সবগুলোতে এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ শুরু হয়নি। নতুন ৬টি কারখানা আগামী ডিসেম্বরে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আদমজী ইপিজেড থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ৭শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হংকং, কানাডা, জার্মানি, ইউইএ, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ভারত, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ এইপিজেডে বিনিয়োগ করেছে।

আদমজী ইপিজেডে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ১২২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময় পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৩১৩ দশমিক ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।

সূত্র মতে, পূর্ব পাকিস্তানের ২২ পরিবারের অন্যতম ধনাঢ্য আদমজী পরিবারের তিন ভাই ওয়াহেদ আদমজী ওরফে দাউদ আদমজী, জাকারিয়া আদমজী ও গুল মোহাম্মদ যৌথভাবে ১৯৫০ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ২৯৭ একর জমি নিয়ে আদমজী জুট মিলস নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মিলে তাঁতকল বসানো হয় ৩ হাজার ৩০০টি। ১৯৫১ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৭০০ হেসিয়ান ও ১০০০ সেকিং লুম দিয়ে শুরু হয় মিলের উৎপাদন। তখন প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত আদমজী জুটমিলে উৎপাদন করা হতো গড়ে ২৮৮ টন পাটের চট। ওই সময় মিলের উৎপাদন থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো।

মিলটিতে কাজ করতেন ২৪ হাজার ৯১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক।

আদমজীর ভেতরে ৬টি মিলের মধ্যে ১, ২ ও ৩ নং মিলে উৎপাদন হতো হেসিয়ান ও সেকিং। এগুলো থেকে তৈরি চটের ব্যাগ ও বস্তার একটি অংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হতো।

৪ নম্বর মিলে তৈরি উন্নতমানের ব্রডলুম, জিও নামে পাটজাত পণ্য পুরোটাই বিদেশে রপ্তানি হতো। ৫ নম্বর মিলে (এবিসি) তৈরি হতো লেমিনেটেড পলি ব্যাগ। আর ৬ নম্বর মিলটি ছিল ওয়ার্কশপ।

আদমজী জুট মিলে উৎপাদিত চট, কার্পেটসহ বিভিন্ন প্রকার পাটজাত দ্রব্য দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হতো চীন, ভারত, কানাডা, আমেরিকা, থাইল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি ছিল ব্যক্তি মালিকানাধীন। ১৯৭৪ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশবলে দেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আদমজী জুট মিলকেও জাতীয়করণ করে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনকে (বিজেএমসি)।

মিলে ২০০০ সাল পর্যন্ত লোকসান হয় সাড়ে ১২০০ কোটি টাকা। বিগত কয়েকটি সরকার মিলটিকে বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও শ্রমিক রোষাণলের কথা মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত পিছু হটে।

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে ২০০২ সালের ৩০ জুন আদমজী জুট মিল চিরতরে বন্ধ করে দেয়।

বন্ধ হওয়ার সময় আদমজীতে স্থায়ী শ্রমিক সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৩১ জন। এছাড়া ৬ হাজার ২৫২ জন অস্থায়ী শ্রমিক ও ১ হাজার ৯৯২ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথানের সাক্ষী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে এক মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা এশিয়ার বৃহত্তম সেই আদমজী জুট মিল এখন শুধুই স্মৃতির করিডরে বন্দি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।