ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

শনিবারের স্পেশাল রিপোর্ট

চামড়া শিল্পনগরে অবশেষে আলোর মুখ

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৬
চামড়া শিল্পনগরে অবশেষে আলোর মুখ ছবি: রাজীব/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাভার ট্যানারি শিল্পনগর এলাকা থেকে ঘুরে এসে: কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পর শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে সাভার চামড়া শিল্পনগর। সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) বা কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের চারটি মডিউলের মধ্যে দু’টির কাজ শেষ পর্যায়ে।

এখন চলছে মেশিন বসানোর কাজ। মেশিন স্থাপনের পর আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সিইটিপি’র ট্রায়াল ভার্সন (পরীক্ষামূলক) চালু করা হবে।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সাভারের বলিয়াপুর ইউনিয়নে চামড়া শিল্পনগর এলাকায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

চামড়ায় ব্যবহৃত ক্যামিকেল নষ্ট করার জন্য ‍সিইটিপি’তে ৪টি মডিউলে ৮টি অক্সিডাইজেশন ডিস্ক থাকবে। ক্যামিকেল ও বর্জ্য পৃথক হবে এসব ডিস্কের মাধ্যমে। চারপাশে উঁচু দেয়াল, মাঝে পুকুরের মতো করে তৈরি এসব অক্সিডাইজেশন ডিস্ক। ট্যানারি থেকে বর্জ্য পাইপ লাইনের মাধ্যমে এসে কয়েকটি প্রক্রিয়ায় পরিশোধন করতেই এসব অক্সিডাইজেশন ডিস্ক।

ট্যানারি বর্জ্য প্রথমে পাইপ লাইনের মাধ্যমে যাবে ব্রাইটেক্স চেম্বারে। সেখান থেকে রিফাইন হয়ে সলিট চেম্বারে যাবে। এরপর ইকুয়ালাইজেশন ট্যাংক থেকে যাবে অক্সিডাইজেশন বক্স ‘এ’তে। এরপর অক্সিডাইজেশন বক্স ‘বি’ হয়ে যাবে স্ল্যাম রিয়েল ট্যাংকে। সর্বশেষে বর্জ্য যাবে ডাম্পিং মেশিনে। এরপর বিষমুক্ত তরল চলে যাবে ধলেশ্বরী নদীতে। আর ডাম্পিংয়ের বর্জ্য দিয়ে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। এ প্রক্রিয়ায় যে বিদ্যুৎ খরচ হবে তা নিজস্ব পাওয়ার স্টেশন থেকেই মেটানোর চিন্তভাবনা রয়েছে। এজন্য ৪০ মেগাওয়াটের পাওয়ার স্টেশন প্রস্তুত রয়েছে।
 
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারটি মডিউলের দু’টির কাজ শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে অক্সিডাইজেশন ডিস্ক এ-১, এ-২ ও বি-৩, বি-৪ এর কন্সট্রাকশন কাজ শেষে এখন চলছে ফিনিশিংয়ের কাজ। আগামী রোববার (১০ জানুয়ারি) এসব ডিস্কে মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু হবে, যা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকায় চায়না থেকে পাম্প, প্যাডেল সিস্টেম পাম্প, ডিটক্সাইড ব্লোয়ার (যা দিয়ে বাতাস দেওয়া হয়), ছাঁকনি বা স্প্রিনিং মেশিন আনা হয়েছে।

সিইটিপি প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম-সচিব মো. আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, সিইটিপি’র দু’টি মডিউলের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। রোববার (১০ জানুয়ারি) মেশিন বসানোর কাজ শুরু হবে। ১৫ জানুয়ারি মেশিন বসানোর কাজ শেষ হলে ৩০ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে সিইটিপি চালু করা হবে। বাকি দু’টি মডিউল আগামী দুই মাসের মধ্যেই শেষ করতে পারবো।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দু’টি মডিউলের অক্সিডাইজেশন ডিস্কের ভেতরের কাজ শেষ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। এই ডিস্কের ওপর দিয়ে হাঁটাচলার জন্য নির্মিত ওয়াকওয়ের কাজ দুয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানা গেছে।
 
এদিকে ট্যানারি থেকে বর্জ্য সিইটিপি’তে নেওয়ার জন্য ১৪ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে ৪ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ এই মাসেই শেষ হবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিকভাবে যেহেতু নদী থেকে পানি এনে সিইটিপি চালু করা হবে, তাই পাইপ লাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও সমস্যা হবে না বলে জানান এক প্রকল্প কর্মকর্তা।

তবে নির্মাণ শ্রমিকদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এই মাসের মধ্যেই আমাদের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এ মাসে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে যাবে, কারণ টুকিটাকি অনেক কাজ বাকি।

২০১৪ সালে শুরু হওয়া সিইটিপি’র কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে। এরপর ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়‍ানো হয়। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরেক দফা সময় বাড়ানো হয়। পরে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর শেষ সময় নির্ধারণ করা হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এখন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে দু’টি মডিউল পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার প্রস্তুতি চলছে।
 
পাশের নদীর পানি দিয়ে সিইটিপি চালু করে মেশিনগুলো পরীক্ষা করা হবে। এরপরেই মূল কাজ শুরু হবে। তবে চারটি মডিউলের মধ্যে চালু হতে যাওয়া দু’টি মডিউলের প্রতিদিন ১২ হাজার ৫০০ কিউবিক মিটার বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। বাকি দু’টি মডিউল চালু হলে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা অর্জন করবে সিইটিপি।   

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ)’ সদ্য বিদায়ী সভাপতি আবু তাহের বাংলানিউজকে জানান, সিইটিপি চালু হলে ট্যানারি মালিকরা তাদের প্রতিষ্ঠান সেখানে স্থানান্তর করবে। অনেকেই সাভারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। আমি মনে করি, ৫০টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠান গেলেও সিইটিপি চালাতে সমস্যা হবে না।
 
সিইটিপি চালু হলেই হাজারীবাগ থেকে সাভারে যাবে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে বেশির ভাগই সাভার শিল্পনগরী এলাকায় যাওয়ার কাজ শুরু করেননি। ১৫৫টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৪টি আংশিক কাজ শেষ করে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু করার পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ৫০টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠানের একতলা ভবন পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে। বাকিদের বেশির ভাগই সীমানা প্রাচীর নির্মাণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
 
এতোদিন ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ ছিল, সিইটিপি’র নির্মাণ কাজ শেষ না হলে, সাভারে গিয়ে লাভ নেই। সেখানে গিয়ে তো উৎপাদন শুরু করা যাবে না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সিইটিপি নির্মাণ কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সিইটিপি’র নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে।

সাভারের বলিয়াপুরে ২০০ একর জায়গাজুড়ে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগর গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে সিইটিপি। ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট একনেকে চামড়া শিল্পনগর প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ে। এই শিল্পনগরে ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি কারখানা স্থাপন করা হবে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।               
              
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৬
এসএম/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।