ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৩১ মে ২০২৪, ২২ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

নকলে সয়লাব প্রসাধনীর বাজার

জান্নাতুল ফেরদৌসী, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৬
নকলে সয়লাব প্রসাধনীর বাজার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বেশি লাভের আশায় বিভিন্ন নামি-দামি বিদেশি ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে নোংরা পরিবেশে দেশেই প্রসাধনী তৈরি ও বাজারজাত করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
আর এসব ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহার করে চুলকানিসহ নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।



ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব প্রসাধনী ব্যবহারে চর্মরোগ, স্কিন ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগের প্রবণতা বাড়ছে। একই সঙ্গে বেশি দামে পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।

সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেট মার্কেট, নিউ মার্কেট, আলমাস, ইস্টার্ন প্লাজা, মালিবাগসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বড় বড় শপিংমলে বেশ চড়া দামে বিভিন্ন ধরনের নামি-দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে। নকল হওয়ায় অনেক সময় দরকষাকষি করে সাধারণ দোকানগুলোতে নির্দিষ্ট মূল্যের চেয়ে বেশ কম দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

নিউ মার্কেটের একটি প্রসাধনীর কথা হয় রুবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে। পেশায় গৃহিণী এই নারী বলেন,‘ ফগের বডি স্প্রে কিনেছি। পটের গায়ে ২৬০ টাকা মূল্য লেখা থাকলেও আমার কাছ থেকে দোকানি ২১০ টাকা নিয়েছে। কম দামে পেয়েছি তাই এখান থেকেই কিনলাম। পণ্য নকল না আসল এটা বোঝার তো উপায় নেই।

জানতে চাইলে ওই দোকোনের কর্মচারী আফজাল হোসেন বলেন, কাস্টমার ধরে রাখতে হলে একটু ছাড় দিয়েই বিক্রি করতে হয়। এটা ব্যবসায়িক কৌশল।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘লস কেন হবে। কেনার সময় আমরাও তো কিছু ছাড় পাই।

তবে গোমর ফাঁস করেন আলমাস সুপার শপের ধানমণ্ডি শাখার কর্মকর্তা সুমন।

বলেন, বাজারে অনেক আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে। আসল প্রসাধনী কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। নামি-দামি ব্র্যান্ডের পণ্য নকল করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কম দামে এসব পণ্যই বিক্রি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে জনপ্রিয় পণ্য বিশেষ করে পেনটেইন, হেড অ্যান্ড শোল্ডার, সানসিল্ক, গার্নিয়ার শ্যাম্পু, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী, বিভিন্ন ব্যান্ডের স্কিন ক্রিম, নেভিয়ার ক্রিম,হ্যাভক, ফগ, এক্স, পন্ডস, ভ্যাসলিন, বডি স্প্রে, নামি ব্র্যান্ডের বডি লোশন উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া দৈনন্দিন আরও অনেক প্রসাধনী নকল করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

র্যাব সূত্র জানায়, গত কয়েকমাসে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৮০ লাখ টাকার নকল ভেজাল প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে।

এরমধ্যে  যাত্রাবাড়ীর ইবনেসিনা ফুড অ্যান্ড কোম্পানি, কামরাঙ্গীর চরের জে পি গার্মেন্টস, প‍ূর্ব রসুলপুরের মায়ের দোয়া গার্মেন্টস, চকবাজারের মেসার্স মিনু পারফিমারি ও লিটা শরীফ ভবনে অভিযান চালানো হয়।

এদিকে শুল্ক, গোয়েন্দা ও তদন্ত  অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মেসার্স মুনস্টার মার্কেটিং লিমিটেডের কারখানা থেকে ২০ কোটি টাকা মূল্যের আমদানি নিষিদ্ধ অবৈধ পণ্য জব্দ করা হয়।

এ সময় দেশীয়ভাবে প্রস্তুত বিভিন্ন কসমেটিকসের মোড়কে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া যায়।

এছাড়া বিদেশ থেকেও নিম্নমানের পণ্য আমদানি করার সময় বিপুল পরিমাণ নকল প্রসাধনী (হেয়ারজেল, বডি লোশন, শ্যাম্পু ও ফেসিয়াল ক্রিম) জব্দ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও কেরাণীগঞ্জে নকল প্রসাধনী উৎপাদন করা হয়। এসব পণ্য দেখলে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই যে তা নকল।

শুল্ক, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান বাংলানিউজকে জানান, কিছুদিন আগেও ৪০ ট্রাক নকল প্রসাধনী আটক করা হয়েছে। এগুলো শুধু নকলই নয়, এর মধ্যে এমন কিছু কেমিক্যাল আছে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

নকল ও ভেজাল পণ্যের সরবরাহ বাজারে দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন তিনি। ‍

র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বাজারে প্রসাধনী পণ্যের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই নকল ও ভেজাল। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যবহারকারীরা এটা খুলে ব্যবহার না করবেন, ততক্ষণ বোঝার উপায় নেই যে এটা নকল পণ্য।

বাড়ছে চর্মরোগসহ স্বাস্থ্যঝুঁকি:
যোগাযোগ করা হলে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শামসুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, নকল পণ্য ব্যবহার শারীরের জন্য ক্ষতিকর। পণ্যের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল কতটুকু তার উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যঝুঁকি মাত্রা। নকল লোশন, স্নো বা স্কিনের যে কোনো কসমেটিকস ব্যবহারে চর্মরোগ হতে পারে।

তিনি বলেন, নকল পণ্য ব্যবহারে চুলপড়া, চোখের সমস্যা, মুখ ‍ফুলে যাওয়া, শরীরে ঘা, হাঁপানি রোগসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

নকল পণ্য ব্যবহার, খাবারে ফরমালিনের কারণে দিন দিন চর্মরোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান ডা. শামসুল হুদা।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৯৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
এমএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।