ঢাকা: বাংলাদেশকে গ্লোবালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার ঢাকা আসছে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর)।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর বা ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব লেবার (ইউএসডল) এর প্রতিনিধিসহ পাঁচ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতার এ দলটি ৩০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে।
সূত্র জানায়,এবারের সফরে ইউএসটিআর প্রতিনিধি দল তৈরি পোশাক ও চিংড়ি শিল্পে ন্যূনতম মজুরি, কাজের পরিবেশ , ,স্বাস্থ্যসুবিধাসহ প্রাপ্য পেশাগত সুবিধা, নিরাপত্তা ও ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার ব্যাপারে অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে বলে ।
ইউএসটিআর’র এই সফর কর্মসূচি সম্পর্কে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শ্রম অধিকার সংগঠন সলিডারিটি সেন্টারের আবাসিক প্রতিনিধি ডেভিড জন ওয়ালেস বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, বাংলাদেশ নতুন করে জিএসপি সুবিধা পেতে যে আবেদন করেছে সে ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিতে উচ্চ পর্যায়ের এ প্রতিনিধি দলটি আসছে।
তিনি জানান, তৈরি পোশাকশিল্প , চিংড়িখাত ও ইপিজেড-এ শ্রমিকের প্রাপ্য মজুরি ও অন্যান্য ন্যায্য অধিকার কতটা নিশ্চিত করা হচ্ছে তা সরেজমিন দেখে তার ভিত্তিতেই রিপোর্ট দেবে প্রতিনিধি দলটি।
প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের জিএসপি পাবার বিষয়টি নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৮ সালে জিএসপি তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিতে ইউএসটিআর-এর কাছে আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ফেডারেশন ও শিল্প সংস্থাসমূহের কংগ্রেস এএফএল-সিআইও। সেযাত্রা প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিলো মজুরি স্বল্পতা শিশুশ্রম ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ না থাকা ও পেশাগত নিরাপত্তাহীনতা ।
ওই বছর বাংলাদেশের বিষয়ে কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত না নিলেও বাংলাদেশের শ্রম খাতকে কঠোর পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ইউএসটিআর।
ইউএসটিআর’র সফর প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শফিউল আলম মহিউদ্দিন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, বরাবরই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত জিএসপি সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করে আসছে। এবারেও চেষ্টা করবে।
তৈরি পোশাক খাতে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের বিষয়টি ইউএসটিআর’র এবারের সফরে গুরুত্ব পাবে এমন পটভ’মিতে শফিউল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যতটুকু সম্ভব ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দিতে আমরা প্রস্তুত। ’
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, সূত্র জানায়, চিংড়ি শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া এবং সম্প্রতি খুলনার জাহানাবাদ সি ফুড ফ্যাক্টরিতে গঠিত ট্রেড ইউনিয়নের সকল কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত করার অভিযোগের বিষয়টি ইউএসটিআর দলটি এবারের সফরে বিশেষ গুরুত্ব দেবে।
চিংড়ি শিল্পের পরিস্থিতি জানতে খুলনা সফরের সময় দলটি চর রূপসা এলাকায় অবস্থিত জাহানাবাদ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ চিংড়ি শিল্প মালিক সমিতির সহ সভাপতি শেখ আবদুল বাকি টেলিফোনে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘আমাদের হিসেবে সব ধরনের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করেই চিংড়ি শিল্প চলছে। আশা করছি, জিএসপি সুবিধার বিষয়ে ইউএসটিআর-এর সুপারিশ আমাদের পক্ষেই যাবে। ’
জাহানাবাদ ফ্যাক্টরির ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে তিনি জানান, মালিক পক্ষ থেকে অ্যাসোসিয়েশনের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দুর্ব্যবহার করার কারণেই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে জাহানাবাদ সি ফুডের মালিক আবদুল জব্বার মোল্লার সঙ্গে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা না বলেই ফোন লাইন কেটে দেন। পরে একাধিকবার তাকে টেলিফোন করেও পাওয়া যায় নি।
ফ্যাক্টরির চাকরিচ্যুত শ্রমিক নেতা শামীম হাসান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার কারণেই আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তিনি জানান, ইউনিয়নের আট জন কর্মকর্তার ছয় জনকেসহ মোট ২৫ জনকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
তবে ইউএসটিআর এর সফরের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন শামীম হাসান।
বাংলাদেশ সময় ১৮৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১০