ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

কমদামে সিগারেট বাজারজাত: কৌশলে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ!

তপন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১০
কমদামে সিগারেট বাজারজাত: কৌশলে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ!

চট্টগ্রাম: বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের (বিএটিজি) বিরুদ্ধে কৌশলে সরকারের কয়েক শ’ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আন্তর্জাতিক মানের ব্রিস্টল সিগারেট কম দামে বাজারজাত করে প্রতিষ্ঠানটি এ কারসাজি করছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

তবে এ অভিযোগ অসত্য বলে নাকচ করে দিয়েছেন বিএটিজির জনসংযোগ কর্মকর্তা শামীম জাহেদী।

এদিকে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ অক্টোবর সরকারের ‘মূল্য সংযোজন কর’ এর কমিশনার ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বিএটিজির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ব্রিস্টল ব্র্যান্ডের সিগারেটের মূল্যভিত্তি সংশোধনের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ (৪/খঞট (মূসক)/২৫ ব্রিটিশ/টোব্যাকো/০১/০৬/৪২২২) দিয়েছেন।

বিএটিজি নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছে বলে সূত্র জানায়।

উচ্চ মূল্যের সিগারেট কম মূল্যে বাজারে ছেড়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে এ নোটিশে উল্লেখ করা হয়। ব্রিস্টল সিগারেটের বর্তমান মূল্য বাড়িয়ে কেন তা পুনর্নির্ধারণ করা কেন হবে না তা নোটিশ প্রাপ্তির দশ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। অন্যথায় একতরফাভাবে মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

এ নোটিশেই ৯৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন, সম্পূরক শুল্ক ৫৩ শতাংশ ও মূসক ১৫ শতাংশ হারে বিশ শলাকার প্রতি প্যাকেটের মুদ্রিত খুচরা মূল্য ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা ও একই হারে দশ শলাকার মূল্য ১৮ টাকা ৪০ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।

এ ব্যাপারে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা শামীম জাহেদী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ব্রিস্টল ব্র্যান্ডের সিগারেট সরকারের অনুমোদন পেয়ে মূল্য নির্ধারণ হওয়ার পর বাজারজাত শুরু হয়। ’

তবে সরকারের কর বিভাগ থেকে এ সিগারেটের দাম পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য নোটিশ পেয়েছেন বলে  স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগিরই এ নোটিশের জবাব দেবো। ’

শামীম জাহেদী যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘সরকার একবার মূল্য নির্ধারণ করেছে, এখন সরকার হয়তো এ সিগারেটের পুনর্মূল্যায়ন করার চিন্তা করছে। এ ব্যাপারে আমরাও আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো। ’

‘এখানে কোনও শুল্ক ফাঁকি হচ্ছে না এবং শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগটি একপেশে’--এ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা নোটিশের জবাব দেওয়ার পর সত্যিকার বিষয়টি উঠে আসবে। ’
 
সূত্রমতে, প্রতিবেশি দেশ ভারতে দশ শলাকার এক প্যাকেট ব্রিস্টল সিগারেটের মূল্য যেখানে ভারতীয় ২৫ রুপি সেখানে বাংলাদেশের খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৮.৪০ টাকায়। এছাড়া আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে ব্রিস্টল ধূমপায়ীদের কাছে এ সিগারেট প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড’র সিগারেট হিসেবে পরিচিত।

এদিকে, কম দামে ব্রিস্টল সিগারেট বাজারজাত করায় দেশীয় অন্যান্য সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা উদ্বিগ্ন।

সম্প্রতি দেশীয় একটি কোম্পানির প থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদের কাছে দেওয়া চিঠিতে আবেদন জানানো হয়, আন্তর্জাতিকমানের উচ্চ মূল্যের সিগারেট কম মূল্যে বিক্রির অনুমতি যেন না দেওয়া হয়।

এমন অনুমতি দেয়া হলে দেশীয় মালিকানাধীন কারখানাগুলো অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বলেও এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।  

দেশীয় একটি শিল্প কারখানার স্বত্ত্বাধিকারী বাংলানিউজকে বলেন, এরকম চলতে থাকলে এক সময় বাংলাদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের ধ্বংস করে দিয়ে নিজেদের একচেটিয়া বাজার প্রতিষ্ঠা করবে।

বাংলাদেশ সময় ১৬৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।