ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

সুলভে বিদ্যুৎ দিতে সরকারি অর্থায়নই মুখ্য: দেনা বাড়বে বেসরকারিকরণে

সোহেল রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১০
সুলভে বিদ্যুৎ দিতে সরকারি অর্থায়নই মুখ্য: দেনা বাড়বে বেসরকারিকরণে

ঢাকা: বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতে অতিনির্ভরতা সামাজিক বৈষম্য বাড়িয়ে দিতে পারে। বেড়ে যেতে পারে রাষ্ট্রের দেনাও।

তাই সর্বসাধারণকে সুলভে বিদ্যুৎ দিতে খাতটিতে সরকারি অর্থায়নই মুখ্য।

তাই সরকারি উদ্যোগে বাজারে বন্ড ছেড়ে বিদ্যুৎখাতের তহবিল সংগ্রহের পরামর্শ দিয়েছে দেশের কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা।

সংস্থাগুলো হলো- অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, ইক্যুইটিবিডি, জুবিলি সাউথ, সুপ্র, ভয়েস, মিডিয়া অ্যান্ড ট্রেড ফাউন্ডেশন ও উন্নয়ন অন্বেষণ সংস্থা।

সংস্থাগুলোর গবেষকরা ফিলিপাইনের উদাহরণ টেনে বলছেন, এশিয়ায় বেসরকারি খাতে বিদুৎ ছেড়ে দেওয়া দেশগুলোতে সরকারি দেনা ও সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। বাংলাদেশেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
 
তারা আরো বলছেন, উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ একটি অপরিহার্য মৌলিক সেবা। তাই এর ওপর জনগণের অধিকার রয়েছে। কিন্তু এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎখাত বেসরকারিকরণ করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য এ অঞ্চলের সরকারগুলোকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি।

তারা জানান, এরই মধ্যে ফিলিপাইন সরকার সে দেশের বিদ্যুৎখাতকে বেসরকারিকরণের চুক্তি করেছে। চুক্তিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বৈদেশিক বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাস, জ্বালানি ক্রয়মূল্যের সমতা নিশ্চিতকরণ নানা নিশ্চয়তাও দিয়েছে ফিলিপাইন সরকার। তাই সেখানে বিদ্যুতের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে সরকার ও জনগণকে।

গবেষকরা আরো জানান, বিদ্যুতের চরম সঙ্কট থাকলেও বাংলাদেশের জন্য দাতাগোষ্ঠী প্রণিত আগামী চার বছরের কৌশলপত্রে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প রাখা হয়নি।
 
ইক্যুইটিবিডি’র গবেষক সৈয়দ আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও এডিবি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে কোনো আর্থিক সহায়তা দেয়নি। বরং সংস্কারের নামে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। যা বিদ্যুৎ সঙ্কট আরো ঘণীভূত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎখাত সংস্কার করতে গিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে সরকারের দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ কোটি ডলার। ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সরকার শুধু পেট্রোলিয়াম ক্রয় খাতে ভর্তুকি বাবদ ৩শ’ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে। এই অর্থ বিদ্যুৎখাতে ব্যয় করলে বাংলাদেশে আর বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকতো না। ’

উন্নয়ন অন্নেষণের গবেষক রাশেদ আল তিতুমীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে বিদ্যুৎখাতে মাত্র ১৬ শতাংশ হচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগ। সেদেশে বিদ্যুতের দামও এশিয়ার তুলনামূলক কম। তাই এটা প্রমাণিত যে সর্ব সাধারণকে সুলভে বিদ্যুৎ দিতে খাতটিতে সরকারি অর্থায়নই মুখ্য। ’

তিনি আরো বলেন, ‘একমাত্র সরকারি খাতই দেশের সব প্রান্তে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে দারিদ্র ও  বৈষম্য দূর করতে পারে। যা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সম্ভব নয়। বিদ্যুতের ওপর জনগণের অধিকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এ খাতে অধিকতর সরকারি বিনিয়োগ জরুরি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।