ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

চট্টগ্রামে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের দাপট ॥ লোকসানের মুখে আড়তদাররা

রমেন দাশগুপ্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১০
চট্টগ্রামে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের দাপট ॥ লোকসানের মুখে আড়তদাররা

চট্টগ্রাম: মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দাপটে এবার নির্ধারিত ক্রয়মূল্যের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বেপারীদের কাছ থেকে চামড়া ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া নিতে রাজী নন।



ফলে কাঁচা চামড়া নিয়ে ব্যাপক লোকসানের আশংকা করছেন আড়তদার ও কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা। তির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চামড়া শিল্পসংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠন- বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সোমবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কোরবানির চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।

সংগঠনগুলো ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা ও খাসির চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, আড়তদাররা বেপারীদের কাছ থেকে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনেছেন ৮৫ থেকে একশ’ টাকা দরে। আর খাসির চামড়া কিনেছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

বেপারীদের সঙ্গে কথা বলে মুসলিম উদ্দিনের দাবির সত্যতা পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বেঙ্গুরা এলাকার স্থানীয় চামড়াবেপারী মো. শফি বাংলানিউজকে জানান, তিনি নিজে বিভিন্ন গ্রাম থেকে গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং খাসির চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কিনেছেন। আড়তদারদের কাছে গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায়। খাসীর চামড়া বিক্রি করেছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

বেশি দামে চামড়া কেনার ব্যাপারে চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নতুন ব্যবসায়ী, মুরগীর দোকানদার, বিদেশ ফেরত অনেক ব্যক্তি বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। বাধ্য হয়ে আমাদেরও দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়েছে। তা না হলে এসব চামড়া উত্তরবঙ্গ হয়ে সীমান্তের ওপারে চলে যেত। ’

উল্লেখ্য, প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্থানীয় বেপারীরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। এরপর সেগুলো আড়তদারদের কাছে বিক্রি করা হয়। আর আড়তদাররা সরবরাহ করেন ট্যানারি মালিকদের কাছে।

চট্টগ্রামে দুটি ট্যানারি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মদিনা ট্যানারি এবং অপরটি রিফ লেদার লিমিটেড।

মদিনা ট্যানারির মালিক আবু মোহাম্মদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কাঁচা চামড়া সনাতন পদ্ধতিতে শুকানোর অনুমতি না দেওয়ায় তিনি এবার চামড়া না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রিফ লেদারের পরিচালক মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে সরাসরি বলেন, ‘আমি সমিতির নির্ধারিত দামের তুলনায় বেশি দামে গরুর চামড়া কিনতে রাজী আছি। তবে কোনমতেই সেটা ৭০ থেকে ৮০ টাকার বেশি নয়। ’

তিনি এই মূল্যে কয়েক হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন বলেও দাবি করেছেন।

কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে এবার ৮০ কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। এখন প্রতি বর্গফুট চামড়ায় যদি ৩০ থেকে ৪০ টাকা লোকসান হয় তাহলে আড়তদারদের কমপে ৫০ কোটি টাকা লোকসান হবে।

তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার গরুর চামড়া এবং ৭০ হাজারের বেশি খাসীর চামড়া সংগ্রহ করেছেন আড়তদাররা।

কাঁচা চামড়া সংগ্রহের কাজ কমপে আরও তিনদিন চলবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।