ঢাকা, বুধবার, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৪ জুন ২০২৫, ০৭ জিলহজ ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সংসদের বাইরে যত বাজেট

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:০৩, জুন ২, ২০২৫
সংসদের বাইরে যত বাজেট তাজউদ্দীন আহমেদ, এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, সালেহউদ্দিন আহমেদ

ঢাকা: দেশের ইতিহাসে ৫৪ বছরে বেশ কিছু বাজেট ঘোষণা হয়েছে সংসদ না থাকার সময়ে। এর মধ্যে দেশের প্রথম বাজেটটি দিয়েছিল মুজিবনগর সরকার।

তখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এম মনসুর আলী। এরপর কয়েকবার সংসদ না থাকার সময়ে বাজেট ঘোষণা হয়েছে।

আজ সোমবার (২ জুন) বিটিভি থেকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এটি জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় বাজেটের আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

এবার সংসদ না থাকায় আলোচনার বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হবে। সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেট চূড়ান্ত করে আগামী ২৩ জুনের পর কোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

সংসদের বাইরে যেসব বাজেট

প্রথম বাজেট ঘোষণা করে মুজিবনগর সরকার, যার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন এম মনসুর আলী। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেই বাজেট অনুমোদন দেন। ১৯৭১ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—তিন মাসের জন্য ঘোষিত সেই বাজেটে রাজস্ব আয় ছিল ৭ কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৮ টাকা এবং ব্যয় ছিল ৮ কোটি ৬২ লাখ ৪৮ হাজার ২০৪ টাকা। বাজেট ঘাটতি ছিল ৮৮ লাখ ২৯ হাজার ২০৬ টাকা।

বাজেটের ব্যাখ্যামূলক টিকায় বলা হয়েছিল—“আমাদের এখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য দরকারি, অপরিহার্য ব্যয় মেটাতে বাজেট তৈরি করতে হচ্ছে। যেটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে। বাজেট জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১- এই তিন মাস সময়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই আশায় এটা করা হয়েছে যে আমরা এই সময়ের মধ্যেই দেশকে স্বাধীন করতে পারব। ”

এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি একসঙ্গে দুই অর্থবছরের (১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩) বাজেট ঘোষণা করেন।

১৯৭১-৭২ অর্থবছর: রাজস্ব আয় ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৯৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, উন্নয়ন ব্যয় ৫১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

১৯৭২-৭৩ অর্থবছর: রাজস্ব আয় ২৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, রাজস্ব ব্যয় ২১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, উদ্বৃত্ত ৭৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, উন্নয়ন ও পুনর্বাসন ব্যয় ৫০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ছিল ৩১৮ দশমিক ৩০ কোটি টাকা।

মোট বাজেট ছিল ৭১৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, মোট আয় ২৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং ঘাটতি ছিল ৪২৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

বাজেট বক্তৃতায় তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে এই বাজেট প্রচার না করে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করতে পারলে আমি সুখী হতাম। তবে আমি আশা করি, এরপর আর কোনোদিন এইভাবে আমাদের বাজেট প্রচার করতে হবে না। ”

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন।

১৯৭৬-৭৭: বাজেট ঘোষিত হয় বঙ্গভবন থেকে। বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। রাজস্ব আয় ৯৬৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৭৬৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, উদ্বৃত্ত ১৯৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা, এডিপি ১১০০ কোটি টাকা। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রথমবারের মতো দেওয়া হয়।

১৯৭৭-৭৮: বাজেটের আকার ২ হাজার ৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, আয় ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, ঘাটতি ৯৩০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

১৯৭৮-৭৯: বাজেটের আকার ২ হাজার ৪৪৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, আয় ১ হাজার ৩৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ঘাটতি ১ হাজার ৬৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে সচিবালয় থেকে বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

১৯৮২-৮৩: বাজেট ৪ হাজার ৭৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, আয় ২ হাজার ৬৬৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা, এডিপি ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

১৯৮৩-৮৪: বাজেট ৫ হাজার ৮৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, আয় ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, উন্নয়ন বাজেট ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

১৯৮৪-৮৫: বাজেট ৬ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আয় ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, এডিপি ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা।

১৯৮৫-৮৬: বাজেট ৭ হাজার ১৩৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা, আয় ৩ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা, এডিপি ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাজেট উত্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

২০০৭-০৮: বাজেট ৮৭ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা, আয় ৫৭ হাজার ৩০১ কোটি টাকা, ঘাটতি ২৯ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা করা হয়।

২০০৮-০৯: বাজেট ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা, আয় ৭৫ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা, ঘাটতি ২৪ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। স্থানীয় শিল্প সংরক্ষণে শুল্ক কাঠামোয় পরিবর্তন এবং করপোরেট কর হার কমানো হয়।

জিসিজি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।