ঢাকা: দেশের কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের মধ্যে বর্তমানে ব্যাংক ঋণের আওতায় আছে মাত্র ৯ শতাংশ। এ অবস্থায় আরও বেশি উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিগ্রস্ত সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষে বিশেষ মডেল কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকায় একটি হোটেলে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ইউএনডিপি, বাংলাদেশ এ লক্ষে কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মো. কুতুব।
বক্তব্য প্রদান করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম হাসান সাত্তার এবং ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দায়ারাত্নে এবং সংস্থাটির আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
কর্মশালায় জানানো হয়, ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে দেশের ৭৮ লাখের বেশি সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই ঢাকার বাইরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হিসাব বলছে, ৭৮ লাখ সিএমএসএমই উদ্যোক্তার মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন মাত্র ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫২৪ উদ্যোক্তা। তার মানে, বাংলাদেশ ব্যাংক, ৬২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ৭০০-এরও বেশি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের নানা উদ্যোগের পরও শতকরা ৯১ ভাগ উদ্যোক্তাই এখনো ঋণের আওতায় আসেননি।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সম্ভাব্য ঝুঁকিগ্রস্ত কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) সহায়তায় ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স সুবিধা প্রবর্তনের লক্ষে একটি মডেল কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ইউএনডিপি।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জলবায়ু-সংবেদনশীল অঞ্চল পরিদর্শনের মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করা হয়েছে এবং উদ্যোক্তা, ট্রেডবডি, চেম্বার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ ও বীমা প্রতিষ্ঠান, ফিনটেক, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় আরো বেশি সংখ্যক সিএমএসএমই উদ্যোক্তাকে ঋণের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ঋণ পরিশোধে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের কর্মসূচির আওতায় ঋণ পরিশোধের লক্ষে গ্যারান্টি স্কিম, বিমা এবং অনুদান সহায়তা প্রদান করা হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ইউএনডিপি’র এই উদ্যোগ সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের কাজে গতি সঞ্চার করবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এসএমই খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মাইক্রোফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট, ইন্সুরেন্স কোম্পানি ব্যবসায়ী সংগঠন, ট্রেডবডি, চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, ফিনটেক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, দেশে ৭৮ লাখের বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশের বেশি। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ এসএমই খাতে। এ খাতে প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি জনবল কর্মরত আছে। অধিক জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। এমএসএমই একটি শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর খাত। উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এমএসএমই অবদান অনেক। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও সিএমএসএমই খাতের বিকাশ ও উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে এসএমই ফাউন্ডেশন অনুঘটকের ভূমিকা রাখছে। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে এসএমই খাতের উন্নয়নের লক্ষে এসএমই ফাউন্ডেশন সরকারের জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ এসএমই নীতিমালা ২০১৯ এবং এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা এসএমই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, যাদের ৬০ শতাংশই নারী-উদ্যোক্তা।
জিসিজি/জেএইচ