ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

দাম কমলেও ক্রেতার নাগালের বাইরে বিদেশি ফল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৪
দাম কমলেও ক্রেতার নাগালের বাইরে বিদেশি ফল

ঢাকা: ডলারের দাম বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে না পারা ও আমদানি খরচ বাড়ায় দেশের বাজারে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল বিদেশি ফলের দাম। বেশ কয়েকমাস এমন পরিস্থিতি বিরাজের পর এখন ধীরে ধীরে কমছে এই পণ্যের দাম।

তবে তা এখনও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আসেনি।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি কালো আঙুর ৪২০-৫০০ টাকা, সাদা আঙুর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, লাল আঙুর ৪৫০ টাকা, মাল্টা ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, নাশপতি ২৪০ টাকা, আনার ৩০০ থেকে ৪২০ টাকা, কমলা ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, গোল্ডেন আপেল ২৭০ টাকা, হানি আপেল ২৩০ টাকা, গালা আপেল ৩২০ টাকা, ফুজি আপেল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, থাইল্যান্ডের পেঁপে ৮০ টাকা, ভুটানের কমলা ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, দক্ষিণ আফ্রিকার কমলা ২৬০ টাকা, চায়না কমলা ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, গত দুই মাস আগেও প্রতি কেজি মাল্টা ৪০০ টাকা, কমলা ৩০০ টাকা, ফুজি আপেল ৩৮০ টাকা, গোল্ডেন আপেল ৩৫০ টাকা, চায়না কমলা ২০০ টাকা, সুইট কমলা ৪০০ টাকা, লাল আঙুর ৪৫০-৫০০ টাকা, আনার ৫০০-৫৫০ টাকা, নাশপতি ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তারা।

বিদেশি ফলের দাম কমার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা জানান, শীতকাল কমলা, আঙুর, মাল্টা, আনারসহ বিভিন্ন ফলের মৌসুম। তাই দাম কিছুটা কমেছে। তবে এই সময় বিদেশি ফলের দাম যতটা হ্রাস পাওয়া উচিত ছিল ততটা হয়নি। এজন্য ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ফল আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়ানোকে দায়ী করছেন তারা।

কারওয়ান বাজারের ‘আল্লাহর দান’ ফল বিতানের বিক্রেতা হিরো বলেন, সিজনের কারণে বিদেশি ফলের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু যতটুকু কমার দরকার, সে তুলনায় দাম এখনো অনেক বেশি। এই সময় মাল্টার দাম হওয়া উচিত ছিল ১৬০ টাকা কেজি, কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকা। আনারের দাম হওয়া উচিত ছিল ২৫০ টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা। কোথাও কোথাও আরো কমদামে বিক্রি করলেও ৩০০ টাকার নিচে বাজারে আনার নেই।

বিদেশি ফলের দাম কমলেও বিক্রি বাড়েনি বলে জানিয়েছেন এই বিক্রেতা। তার মতে, বিদেশি ফলের আকাশছোঁয়া দামের কারণে দিন দিন বিদেশি ফলের বিক্রি কমছে।

রাকিবুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। যার কারণে মানুষ ফল কিনছে না। গত কয়েকমাসে ব্যবসা অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে।

আসন্ন রমজান মাস ঘিরে এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে হরেক রকমের বাদাম ও খেজুর। প্রতি বছর এই সময় বাদাম ও খেজুর আমদানি করায় দাম কমে। তবে এবার ভ্যাট ও ট্যাক্স ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে এসব পণ্যের দাম কমেনি। বরং উল্টো বেড়েছে।

বর্তমানে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি জাহিদি খেজুর ২৪০ টাকা, বরই খেজুর ৩৬০ থেকে ৪৪০ টাকা, আলজেরিয়ান খেজুর ৫০০ টাকা, মাবরুম খেজুর ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা, সৌদি মরিয়ম খেজুর ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা, আজুয়া খেজুর ১২০০ টাকা, কালমি খেজুর ৯০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা, সাফাভি খেজুর ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা, মেডজুল খেজুর ১২০০ থেকে ১৪৫০ টাকা, খুরমা খেজুর ৩৬০ টাকা, আদম খেজুর ৬০০ টাকা, সুক্কারী খেজুর ৮০০ টাকা, ত্বিন ফল ১১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১৪০০ টাকা, ভাজা কাজু বাদাম ১৫০০ টাকা, কাঠ বাদাম ৯০০ টাকা, আখরোট বাদাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, মিক্স বাদাম ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায় বিক্রেতাদের।

বিক্রমপুর ফল বিতানের বিক্রেতা মো. হোসাইন বলেন, প্রতি বছর এই সময় খেজুর ও বাদাম আমদানি করেন বিক্রেতারা। তবে এবার ভ্যাট ও ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে এসবের খেজুর ও বাদামের দাম বেশি। আগে এক কোটি টাকায় যেই খেজুর আনা যেতো এখন সেই একই পরিমাণ খেজুর আনতে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। যার কারণে তারা খেজুর ও বাদাম আমদানি কমিয়েছেন। আমরাও কম খেজুর কিনছি তাদের কাছ থেকে। ক্রেতাও কমছে দিন দিন।

ডলারের দাম তো কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার যদি আমদানি খরচ কমায় তাহলে এসব বিলাসী পণ্যের দাম কিছুটা কমবে বলে আশা করেন এই বিক্রেতা।

এদিকে দেশি বিভিন্ন মৌসুমি ফল অনেকটাই ক্রেতার নাগালের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি টক বরই ৮০ টাকা, আপেল বরই ১০০ থেকে ১৮০ টাকা, টক-মিষ্টি বরই ১০০ থেকে ১২০ টাকা, থাই বরই ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, বল সুন্দরী বরই ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, বেল (পিছ) ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আমলকী ২০০ টাকা, সফেদা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, আতা ৪৫০ টাকা, ড্রাগন ফল ১৪০ থেকে ২০০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, পেয়ারা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, জাম্বুরা (পিছ) ৫০ থেকে ১০০ টাকা, সবুজ মাল্টা ১২০ টাকা কদবেল (পিছ) ৩০ টাকা, আনারস পিছ ২৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারে দেশি পেঁপে কিনছিলেন একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, দেশি ফলের দাম আমাদের ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকলেও বিদেশি ফলের দাম অনেক বেশি। ছেলে-মেয়েরা বিদেশি ফল খেতে পছন্দ করলেও কেনার সাধ্য হয় না। কারণ, ফল কিনতে গেলে অন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় টান পড়ে। তাই দেশি পেঁপে কিনেই বাড়ি যাচ্ছি। শখ থাকলেও সাধ্য নেই আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের।

মাসুদা আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, ফলের দাম অনেক বেশি। কমলার দাম যদি ১৫০ টাকা হতো, তাহলে হয়ত আমরা কিনতে পারতাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৪
এসসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।