ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কাতার বিশ্বকাপে রেফারিদের কো-অর্ডিনেটর বাংলাদেশি!

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২২
কাতার বিশ্বকাপে রেফারিদের কো-অর্ডিনেটর বাংলাদেশি! ...

চট্টগ্রাম: আর কদিন পরেই বাজবে বিশ্বকাপ ফুটবলের দামামা। স্বাভাবিকভাবেই মাঠের খেলায় নেই বাংলাদেশ।

তবে একেবারেই নেই তা বলা যাবে না! গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ- খ্যাত বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনায় নিযুক্ত রেফারিদের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করবেন বাংলাদেশেরই এক সন্তান।

গর্বিত এই বাংলাদেশের নাম মোহাম্মদ শিয়াকত আলী।

তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়ম নগরের বাসিন্দা। তিনি কাতারের ফুটবল জগতে বাঙালি কুরা হাকাম মুহাম্মদ শেখ আলি নামে বেশি পরিচিত। খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কাতারে যান । যাওয়ার তিন মাস পরে বার্সোলনা একটি ফুটবল প্রজেক্টের মাধ্যমে কাতারে রেফারি করার সন্ধান পান। সেখান থেকে পথচলা শুরু হয়। স্কুলশিক্ষক বাবু মুক্তি সাধন বড়ুয়ার অনুপ্রেরণায় রেফারিতে জড়িত হয়েছিলেন। বর্তমানে কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে সহকারী রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলি। কাতারে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান স্পায়ার একাডেমি থেকে স্পোর্টস সাইকোলজি অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরই মধ্যে রেফারিংয়ের ওপর কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রথম হিসেবে ডি ও সি ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেছেন। আগামী জানুয়ারি মাসে বি ডিপ্লোমা কোর্স শুরু হবে। কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র রেফারি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি।

সোমবার (৩ অক্টোবর) সকালে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় মুহাম্মদ শিয়াকত আলির। তিনি বলেন, গত পৌনে ১০ বছর যাবত কাতার ফুটবলের সঙ্গে জড়িত। কাতারে তালিকাভুক্ত প্রথম শ্রেণির রেফারি। অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচসহ অফিশিয়াল চার হাজার ম্যাচ পরিচালনা করা হয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে ফিফার নিয়োগ দেওয়া চারজন রেফারির মধ্যে চারজনই কাতারের বাসিন্দা। কাতার বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবেন সারা বিশ্বের ৩৬ জন রেফারি, ৬৯ জন সহকারী রেফারি ও ২৪ জন ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়াল। কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিফা কর্তৃপক্ষ রেফারিদের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ১০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে আমি। আগামী ২০ নভেম্বর থেকে মরুর বুকের ফুটবল বিশ্বকাপে মাঠের খেলায় না থেকেও যেন জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম।

ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় কাজের ভিসায় শ্রমিক হিসেবে কাতারে যান জানিয়ে আলি বলেন, যাওয়ার তিন মাস পরে বার্সোলনার একটি ফুটবল ম্যাচে ভিজিটে যায়। সেখানে কাতার ফুটবল ফেডারেশনের বিভিন্ন রিফারির সঙ্গে পরিচয় হয়। রেফারি করার বিষয়টি তাদের সঙ্গে শেয়ার ও আগ্রহ প্রকাশ করি। তখন আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। অ্যাসোসিয়েশন সঙ্গে যোগাযোগ করার পর বিভিন্ন কর্মশালায় ও প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করি। বিদেশি কোটায় ফিজিক্যাল, লিখিত ও সাইকোলজি সব পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়েছি। আমার ওপর সিই মহোদয় সন্তুষ্ট হয়েছে, এরপর থেকে আমার পথচলা শুরু।

কাতারে ঘরোয়া ও বয়স্কভিত্তিক চার হাজার ম্যাচ পরিচলনা করা হয়েছে জানিয়ে মুহাম্মদ শিয়াকত আলি বলেন, কাতারে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান স্পায়ার একাডেমি থেকে স্পোর্টস সাইকোলজি অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরইমধ্যে রেফারিংয়ের ওপর কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রথম হিসেবে ডি ও সি ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেছেন। আগামী জানুয়ারি মাসে বি ডিপ্লোমা কোর্স শুরু হবে।

কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সহকারী রেফারি হিসেবে কাজ করছেন জানিয়ে আলি বলেন, ফিফায় কাতারের রেফারি কোটা ১৬ জন, ১৬ জনই রয়েছে। কোটা খালি না থাকায় প্রবেশ করা যাচ্ছে না।

রাঙ্গুনিয়া থানার মরিয়ম নগর এলাকার মৃত হাজীর রফিকুল ইসলামের ছেলে আমি। আমার বাবা একসময় সরকারি চাকরি করতেন। পরে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রবাসী হন। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে মৃত্যুবরণ করেন। মনিয়মনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে আমি কাতারে যাই ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।  

ভবিষ্যতে স্বপ্ন কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্রীড়ার সঙ্গে সারাজীবন জড়িত থাকব। রেফারির কাজটা চালিয়ে যাব। দিন দিন রেফারিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব, দেশকে তুলে ধরার জন্য, এটা আমার পরিকল্পনা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও রেফারি বিভাগ কোনো সহযোগিতা চাইলে, আমি যেকোনো মুহূর্তে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত ও চেষ্টা থাকবে। ভবিষ্যতে দেশে একটি ফুটবল একাডেমি করতে চাই। ইউরোপ একাডেমির মাধ্যমে যেখানে একটি মেধাবীদের প্রজেক্ট হয়। যেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে রেফারিদের মেধাগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে।  

চট্টগ্রাম বসবাসকালে কীসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি স্কুল ও কলেজের হয়ে ফুটবল খেলাগুলো খেলেছি। ফুটবল সবসময় রেসপেক্ট করতাম, আমি অ্যাথলেটিক ছিলাম। স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। জাতীয় পর্যায়ে আমার কোনো অর্জন নেই।  
বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।

নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে বিশ্বকাপে সেরাটা দিয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে চান শিয়াকত।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।