ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘পতেঙ্গা সৈকতে প্রবেশ বন্ধ করে ব্যবসা চলবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
‘পতেঙ্গা সৈকতে প্রবেশ বন্ধ করে ব্যবসা চলবে না’ বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. সেকান্দার খান। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেকান্দার খান বলেছেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত জনগণের সম্পদ। সেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের।

সেখানে জনগণের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করা যাবে না। যার যার ব্যবসা সে করুক, আমাদের কোনও সমস্যা নেই।
কিন্তু জনগণের প্রবেশ বন্ধ করা যাবে না।  

শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সুলতান আহমদ মিলনায়তনে সিডিএ কর্তৃক পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা প্রদানে নাগরিক স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী পরিকল্পনার প্রতিবাদে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।  

তিনি বলেন, সর্বসাধারণের যে অধিকার রয়েছে সেটি হরণ করা হচ্ছে। সার্কিট হাউসের মাঠ, ফয়’জ লেক চলে গেছে। চাইলেও আমরা এমন নৈসর্গিক পরিবেশে বসে সময় কাটাতে পারবো না। বাণিজ্যিকীকরণের কারণে সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করা হয়েছে।  

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন ৭ কিলোমিটার পরিসরের ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পরিসরকে পর্যটন  জোন-১ এবং পর্যটন জোন-২ হিসেবে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে ২৫ বছরের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

তিনি বলেন, যে কোনো উন্নতমানের নগরীতে সর্বশ্রেণির মানুষের অবকাশ ও বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত পরিসরের নেটওয়ার্ক থাকে। চট্টগ্রাম নগরে তার সিকিভাগও নাই। নানান উপায়ে তাতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত বা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে উন্নত বিশ্বের পরিশীলিত নগরগুলোতে উন্মুক্ত পরিসর বৃদ্ধির জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দিয়ে বিস্তৃত সৈকত বা নদী তীরে প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে কোথাও প্রবেশের অধিকার হরণ করা হয়েছে- এমন তথ্য আমাদের জানা নাই।

‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নগরের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা এবং বিস্তৃত অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) পতেঙ্গা সৈকতকে পাবলিক ওপেন স্পেস বা ‘সর্বজনের উন্মুক্ত পরিসর’ হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ঢাকায় তুরাগ নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে করা রিটের প্রেক্ষিতে সংবিধানের ১৮ক, ২১, ৩১ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে ‘পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সকল উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, সমুদ্র সৈকত, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, বিল, নদীর পাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন ইত্যাদি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া চলবে না’ মর্মে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। কার্যত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কোনো স্থান আইনগতভাবে ইজারা দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে না’।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি- বিপুল ব্যয়ে আউটার রিং রোড নির্মাণের পর পর্যটনের যে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতি এড়ানোর লক্ষ্যে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে লিজ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের মতো একটি সর্বজনীন উন্মুক্ত পরিসরে ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন উন্মুক্ত রেখেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। সৈকতে আগতদের বিনোদন ও অবসরের প্রেক্ষিতে জলযান ভ্রমণ, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, হরেক রকমের দোকান, খেলার ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করে চউকের নিয়ন্ত্রণাধীনে রেখে এসব পরিচালনার সুযোগ লাভ ও ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় যাতে বিনিয়োগকারী কর্তৃক নিরাপত্তাসহ ভ্রমণকারীদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করে সহজেই মুনাফা উঠিয়ে আনা যায়। আমরা চউককে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

শাহরিয়ার খানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি আহমেদ জিন্নুর চৌধুরী, প্রকৌশলী এবিএম এ বাসেত, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা মুনা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।