ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের রাজপথে রথের রশি টানলেন ভক্তরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২২
চট্টগ্রামের রাজপথে রথের রশি টানলেন ভক্তরা কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদ্বোধন করেন ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন ও সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সহ অতিথিরা।

চট্টগ্রাম: করোনার সংক্রমণের কারণে গত দুইবছর চট্টগ্রামের রাজপথে নামেনি রথ। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এবারের রথযাত্রা পেয়েছে ভিন্ন রূপ।

শ্রীজগন্নাথ দেব, বোন সুভদ্রা রাণী ও ভাই বলরাম এসেছেন জনারণ্যে, তাঁদের দর্শনে ভক্ত-দর্শনার্থীরাও নেমেছিলেন পথে। টেনেছেন রথের রশি।

শুক্রবার (১ জুলাই) আষাঢ়ের রথদ্বিতীয়া তিথিতে বিকাল সাড়ে ৩টার পর সুদৃশ্য রথে চড়িয়ে ত্রিদেবতা নিয়ে পথ পরিক্রমায় বাহির হন কয়েক হাজার ভক্ত, টেনেছেন রথের রশি, নিবেদন করেছেন অন্তরের প্রণাম।

কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে নগরের নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এলাকা থেকে শুরু হয় রথযাত্রা উৎসব। তুলসীধামের মোহন্ত শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে উৎসব উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন। আশীর্বাদক ছিলেন পাহাড়তলী কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য। প্রধান অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি রঞ্জন প্রসাদ দাশগুপ্ত এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামদাশ ধর এর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, পুলক খাস্তগীর ও রুমকী সেনগুপ্ত, অনুপ বিশ্বাস, মো. সাহাবউদ্দিন।  শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অর্থ সম্পাদক বিধান ধর, হিরন্ময় ধর। এছাড়া বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেন। সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন ডা. বিনয় পাল। এসময় অতিথিদের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। অতিথিরা তপোবন রথযাত্রা সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন।

রথযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন বলেন, দুইশ বছরের প্রাচীন নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় তুলসীধামের কেন্দ্রীয় রথযাত্রায় মানুষের মিলনমেলা দেখে আমি অভিভূত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের আত্মার সম্পর্ক। ভূ-তাত্ত্বিক সীমানা আত্মার সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না। বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক কখনও ছিন্ন হবে না। সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, চট্টগ্রাম সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়েছে। রথযাত্রা উৎসবে সবাই অংশগ্রহণ করছে। এখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু, জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পালন প্রার্থনার সমতুল্য।  

শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য বলেন, শ্রীজগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবের আশীর্বাদে জীবন হয়  সুন্দর। সমস্যায় ঘেরা জীবনে মুক্তি দেন ত্রি-দেবতা। জীবন রথ পরিচালিত করতে এই রথযাত্রা দেয় অনুপম শিক্ষা।  

শ্রীশ্রী মদনমোহন নরসিংহ গোপাল জীও’র মন্দির থেকে ঢোলক বাদ্য, মঙ্গল শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে শ্রীজগন্নাথ-সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবকে রথারোহণ করানো হয়। পরে বেলুন উড়িয়ে ও রথের রশি টেনে রথপরিক্রমা শুরু করেন তুলসীধামের মোহন্ত এবং অতিথিরা। কেন্দ্রীয় রথের সাথে মহাশোভাযাত্রা সহকারে হাজারী লেইন শ্রীকৃষ্ণায়ন রথ, পাথরঘাটা জগন্নাথ মন্দিরের রথ, গঙ্গাবাড়ির রথ, গৌর গিরিধারী মন্দিরের রথ, সদরঘাট পার্বতী ফকির পাড়ার রথ, মাইজপাড়ার রথ, ফিরিঙ্গীবাজার শাহাজীপাড়ার রথ, টেকপাড়ার রথ, এনায়েত বাজার কেদারনাথ তেওয়ারী কলোনির রথ, টাইগারপাস জগন্নাথ সংঘের রথ, পুরাতন কাস্টমস এলাকার রথ, ইপিজেড শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের রথসহ বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের রথসমূহ পরিক্রমায় অংশ নেয়।

শোভাযাত্রায় অদ্বৈত-অচ্যুত মিশনের ভক্ত, জন্মাষ্টমী ছাত্র পরিষদ, বিভিন্ন মন্দির ও ধর্মীয় সংগঠনের ভক্তরা যোগ দেন। সিএমপির রোডম্যাপ অনুযায়ী এসব রথ নিউমার্কেট থেকে লালদীঘির মোড় ঘুরে আন্দরকিল্লা এলাকায় আসে। সেখান থেকে চেরাগী পাহাড় হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে লাভলেইন সড়ক দিয়ে পুনরায় নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এসে শেষ হবে পরিক্রমা।  

এদিকে তুলসীধামে রথযাত্রা উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় নামযজ্ঞ, মদনমোহন পূজা, জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলভদ্রের পূজা, বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ।

এছাড়া ইসকন নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌরনিতাই আশ্রমের আয়োজনে ডিসি হিলে ২৫তম (রজতজয়ন্তী) রথযাত্রা মহোৎসব আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় ছিল মঙ্গলারতি, গুরুপূজা, শ্রীম্দ্ভাগবত পাঠ, জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রা মহারাণীর রাজবেশ দর্শন, বিশ্বশান্তি কামনায় হোম যজ্ঞ, রাজভোগ নিবেদন, কীর্তনমেলা, ধর্ম মহাসম্মেলন। উপস্থিত ছিলেন মায়াপুরের অমিয় বিলাস স্বামী মহারাজ, গদাধর গোস্বামী মহারাজ। ডিসি হিল প্রাঙ্গণ থেকে মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারীর নেতৃত্বে শুরু হয় রথ পরিক্রমা ও শোভাযাত্রা, যা চেরাগী পাহাড় থেকে আন্দরকিল্লা হয়ে নিউমার্কেট-বোস ব্রাদার্স মোড় এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

অপরদিকে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের উদ্যোগে রথযাত্রায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পরে শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারীর নেতৃত্বে গোলপাহাড় মোড় থেকে রথ পরিক্রমা শুরু হয়, শেষ হবে সিনেমা প্যালেস মোড়ে।

এছাড়া চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে অধিকাংশ থানা এলাকার মন্দির কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে  রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  

চট্টগ্রামে ১৮শ খৃষ্টাব্দের পর রথযাত্রা উৎসবের প্রচলন শুরু হয়। শহরের নন্দনকাননে রথের পুকুর পাড় এলাকায় আষাঢ়ের রথদ্বিতীয়া তিথিতে বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের রথ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে রথগুলো এসে জমা হতো, বসতো মেলা। পুকুরে পুণ্যস্নান করতেন ভক্তরা। সবগুলো রথ পুকুর পাড়ে রাখা হতো বলে স্থানটিও সেই নামে পরিচিতি পায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২২ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।