ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাঙামাটির বনরুপা বাজার, যেখানে মিলে সবকিছু

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
রাঙামাটির বনরুপা বাজার, যেখানে মিলে সবকিছু ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: রাঙামাটির বনরুপা বাজার পরিচিতি পেয়েছে সব ধরনের পাহাড়ি সবজি, ফলমূল ও মাছ-মাংসের জন্য। কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই বাজারের পেছনেই সমতা ঘাট।

প্রায় প্রতিদিনই ঘাটে আসে নৌকাভর্তি জিনিসপত্র।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন এসব পণ্য পিঠে বহন করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করেন বিশেষ ঝুড়ি।

বাঁশের তৈরি এই ঝুড়িকে চাকমারা বলেন ‘কালং’, মারমারা বলেন ‘পরগিন’ আর ত্রিপুরা ভাষায় কাবাং।

বনরুপা বাজারে দেখা যায়, জুমে উৎপাদিত ফসলের সমাহার। সবকিছুই মিলে সেখানে। এসব সবজি কীটনাশক, রাসায়নিক এবং ফরমালিনমুক্ত বলে কিনতে আসেন ক্রেতারা। কিনে নেন পাইকারী বিক্রেতারাও।

জুমের সবজির মধ্যে রয়েছে- পাহাড়ি কচু, ভুট্টা, কুমড়া, তারা, ঠান্ডা আলু, ক্ষিরা, জংলি আলু, তিত বেগুন, হলুদ, আদা, শাক, বাঁশকোড়ল, কচুর লতি, হলুদ ফুল, থানকুনি পাতা, টক পাতা, কাঁকরোল, পটল, কলার মোচা, মাশরুম, মরিচ, শিমুল আলু, পুঁই বিচি ইত্যাদি।

এছাড়া পাওয়া যায় জুমে উৎপাদিত মাল্টা, পেঁপে, কাঁচা তেতুল, আমলকি, পাইন্যা গুলা, লটকন, চুকাই, বরই, আম, জাম, নারিকেল, সুপারি, কাঁঠাল, বেল, কলা, জাম্বুরা, কমলা, লিচু, আনারস, রক্ত ফল সহ নানান ফলমূল। যার স্বাদ সমতলের ফলমূলের চাইতে আলাদা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জুমচাষীরা পাহাড়ের ঢালে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, তুলা, তিল, ভুট্টা, যব, আদা, হলুদসহ বিভিন্ন রকম সবজির বীজ রোপণ করে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস থেকে জুমের ফসল তোলা শুরু হয়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে।  

শুধু শাক-সবজি কিংবা ফলমূলই নয়, কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত সিলন, সরপুঁটি, বাগাড়, মোহিনী বাটা, পাঙাশ, মহাশোল, পোয়া, ফাইস্যা, গুলশা ও সাদা ঘনিয়া, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাচা, পাবদা, চিতল, কেচকি ও চিংড়ি মিলে এই বাজারে।

বিএফডিসি রাঙামাটি বিপণন কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে রাঙামাটির আট উপজেলা বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৬ হাজার ৫০৩ টনের অধিক মাছ অবতরণ করেছে। এর বিপরীতে বিএফডিসির রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।  

সপ্তাহের সাতদিনই খোলা রাঙামাটির এই বাজার। প্রতি শনি ও বুধবার এখানে হাট বসে জমজমাট। এসময়ে দূর-দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য আনা হয় কুইচ্চা, ব্যাঙ, পাহাড়ি শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ও হরেক রকম শুঁটকি।  

পাশাপাশি পাওয়া যায় নাপ্পি, যেটি তরকারির স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। কাঁচা চিংড়ি  রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরির পর গুঁড়ো করা হয়। সেই গুঁড়োর সঙ্গে পানি, লবণ ও নানান উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় নাপ্পি।

বাজারের একপাশে চলে মাংসের বিকিকিনিও। পাহাড়িদের খাবার সাপ, হরিণ, বন্য শুকর,  নানা ধরনের পাখিও বিক্রি হয় এখানে। ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরগরম এই বাজার রাঙামাটিকে পরিচিতি দিয়েছে বিশেষভাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।