ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দোলযাত্রা উৎসব শুক্রবার

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
দোলযাত্রা উৎসব শুক্রবার ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে/তোমার আপন রাগে, তোমার গোপন রাগে/তোমার তরুণ হাসির অরুণ রাগে/অশ্রুজলের করুণ রাগে/মেঘের বুকে যেমন মেঘের মন্দ্র জাগে/তেমনি আমায় দোল দিয়ে যাও…।

রঙ খেলার উৎসব দোলযাত্রা শুক্রবার (১৮ মার্চ)।

বৈষ্ণব বিশ্বাসীদের মতে, ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে বৃন্দাবনের নন্দনকাননে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাধিকা দেবী এবং সখী ও অন্যান্য গোপীর সাথে রঙ খেলায় মেতেছিলেন। এই দিনকে স্মরণ করতেই দোলযাত্রার সূচনা হয়েছিলো।
 প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পঞ্জিকা অনুসারে, ১৪তম রাতের পরবর্তী দিনে উদযাপিত হয় দোল।

এইদিন রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ গুলালে স্নান করিয়ে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন করেন ভক্তরা। এরপর শুরু হয় রঙ দেওয়ার পালা। একে অন্যকে কতখানি রাঙিয়ে তুললো, সেই প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে সবাই। দোলের কথা লেখা আছে পবিত্র গ্রন্থ বেদ এবং পুরাণে। ৭শ শতকের দিকে রাজা হর্ষবর্ধনের সময়ে সংস্কৃত ভাষায় লেখা একটি নাটিকাতে হোলি উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়।  

ইংরেজদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে দোল বা হোলি উৎসব। পুরনো সাহিত্যে অস্তিত্ব পাওয়া যায় হোলির। সপ্তম শতকে রচিত শ্রীকৃষ্ণের রত্নাবলী, জীমূতবাহনের কালবিবেক ও ষোড়শ শতকের রঘুনন্দন গ্রন্থেও এই উৎসবের খোঁজ পেয়েছেন পণ্ডিতেরা।  

স্কন্ধ পুরাণের ফাল্গুন মাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান বর্ণিত আছে। দৈত্যরাজা হিরণ্যকশিপুর অমরত্ব লাভ করার ইচ্ছা, বোন হোলিকা’র দহন, বিষ্ণুভক্ত পুত্র প্রহ্লাদকে ভগবান কর্তৃক রক্ষা ও নৃসিংহ রূপে হিরণ্যকশিপুকে বধ করার ঘটনা- সবকিছুই ঘটেছিলো ফাল্গুনী পূর্ণিমার ঠিক পূর্বদিন। এর মধ্য দিয়েই অশুভ শক্তির হার এবং শুভ শক্তির জয় হয় বলে বিশ্বাস করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।  

দিনটি স্মরণ করতে হোলিকা দহন বা ন্যাড়াপোড়া উৎসব পালন করা হতো দোল উৎসবের আগের দিন। হোলিকার অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনিই দোলের পূর্বদিনে হোলিকাদহন নামে খ্যাত, যাকে বর্তমানে হোলি বলা হয়। ভারতের ব্রজ অঞ্চলে হোলিকে ফাগ্বাহ বলা হয়। গুজরাটে ধুলেতি, উত্তর প্রদেশে লাঠ মার হোলি, উত্তরাখণ্ডে কুমায়নি হোলি, বিহারে ফাগুয়া, উড়িশ্যায় দোলা, গোয়ায় শিগমো, মণিপুরে ইয়াওসাং, কেরালায় উক্কুলি এবং নেপালে বলা হয়- ফাগু।  

পুরাণ অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণকে শ্যাম বর্ণ থেকে উদ্ধার করতে মা যশোদা পুত্রের গায়ে আবির ছুঁয়ে দিয়েছিলেন। তারপর সেই আবির রাধা ও সখা-সখীদের গায়ে ছোঁয়াতে বলেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণও মায়ের আজ্ঞা পালন করেছিলেন। এই রঙ নিয়ে খেলাই দোল উৎসব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে কথিত শাস্ত্রকাররা দোল উৎসবের ঘটনা বিকৃত করে নানানভাবে ব্যাখ্যা করেছে, যা শাস্ত্রবিরোধী আচরণ বলে জানান পণ্ডিতরা।

ফাল্গুনের এই পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রী চৈতন্য দেবের জন্ম হয়, তাই এ দিনটিকে গৌড়পূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।  

দোল উৎসব যেমন প্রাচীন, তেমনই বিশেষ একটি উৎসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বড় পরিসরে রঙ খেলা হয়ে থাকে। লিঙ্গ ও ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষই সামিল হতে পারেন এই আনন্দঘন উৎসবে। এসময় বৈষম্য ভুলে রঙে, গানে, নতুনে মেতে ওঠে সকলে।

নগরের হাজারী লেইন, পাথরঘাটা ফিশারি ঘাট, গোসাইলডাঙ্গা, কাট্টলী, এনায়েত বাজার, কৈবল্যধাম মালিপাড়া, নালাপাড়া, রাজাপুকুর লেইন, আসকার দিঘির পাড়, দেওয়ানজী পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে দোল উৎসবে মেতে ওঠেন। ঘরোয়াভাবেও অনেকে স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের রঙ লাগিয়ে দোল উৎসবে শামিল হন। তুলসীধাম, চট্টেশ্বরী ও পাথরঘাটা শ্রীকৃষ্ণ মন্দির সহ অনেক মন্দিরে এদিন চলে পূজার্চনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ১৭ মার্চ, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।