ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের অধিকাংশ ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
চট্টগ্রামের অধিকাংশ ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগরে প্রায় তিন লাখ ভবনের মধ্যে ৭ হাজারের অধিক বহুতল ভবন আছে। এসব ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ভবন তৈরি হয়েছে, সেগুলোতে নামেমাত্র হলেও অগ্নিনিরাপত্তা আইন মানা হয়েছে।

এছাড়া নগরের ৪১টি বিপণিবিতান এবং ১২টি বস্তির বাসিন্দারা রয়েছেন অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে।

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা ভবন, কারখানা, বিপণি বিতান, হাসপাতাল চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। পাশাপাশি বিল্ডিং কোড না মেনে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ভবনের তালিকাও তৈরি করছে চউক, যেসব ভবন আছে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে।

চউক এর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, চট্টগ্রামে অনেক ভবন, বিপণিবিতান অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে আছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে আবাসিক ভবনের অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করা ভবনগুলো।  

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নগরের ৪১টি ওয়ার্ডকে আটটি জোনে ভাগ করে জরিপ চালায়। জরিপ অনুযায়ী, ২০ হাজারের বেশি বহুতল ভবন থাকলেও তার ৯০ শতাংশের বেশি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, ভবনের কাজ শুরুর আগে ফায়ার সার্ভিস থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হয়। কিন্তু নগরের অধিকাংশ ভবন মালিকের কাছে অনাপত্তিপত্র নেই।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ছয়তলার বেশি বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে সামনে ৩০ ফুট প্রশস্ত জায়গা থাকতে হবে। সিঁড়ি হতে হবে কমপক্ষে ছয় ফুট প্রশস্ত। প্রতি ৫৫০ বর্গফুটের মধ্যে একটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকতে হবে। ছাদের ওপর পানির রিজার্ভারে অগ্নিনির্বাপণের জন্য আলাদা সংযোগ লাইন থাকতে হবে। কমপক্ষে অর্ধেক পানি সংরক্ষণ করতে হবে শুধু আগুন নেভানোর জন্য। বাসার দরজাগুলো হতে হবে অগ্নিনিরোধক, যাতে সেগুলো দিয়ে আগুন প্রবেশ করতে না পারে।  

এদিকে বহুতল ভবনের পাশাপাশি ৪১টি বিপণিবিতান এবং ১২টি বস্তি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফায়ার সার্ভিস নগরের ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট চিহ্নিত করেছে। এসব মার্কেটের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার ও তামাকুমণ্ডি লেইনে আড়ত, পাইকারি বাজার ও খুচরা মার্কেট রয়েছে। এ বাজারগুলোতে আগুনের কারণে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে।

এছাড়া ভেড়া মার্কেট, চালপট্টি, শুঁটকিপট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, ওমর আলী মার্কেট ও মিয়া খান নগর পুরনো জুট মার্কেট, হাজারী গলি আগুনের ঝুঁকিতে আছে। হাজারী গলিতে ছোট-বড় শতাধিক দোকান আছে। সেখানে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা নেই।

অগ্নিঝুঁকিতে আছে নগরের সাত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কলেজ ও মাদ্রাসার ভবনগুলোতে নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। আনাচে কানাচে গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেনগুলো ঘিঞ্জি ভবনে অবস্থিত। সেখানে ছোট ছোট কক্ষে চলে পাঠদান। সিঁড়িগুলোও একেবারে সরু।  

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, মার্কেটে আগুনের ভয়াবহতা খুব বেশি হয়। কারণ একটা মার্কেটের সঙ্গে অন্য মার্কেট সংযুক্ত এবং একাধিক গোডাউন ও সরু রাস্তার পাশাপাশি অগ্নিপ্রতিরোধ, অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে কোনো রকম দুর্ঘটনা হলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা দুরূহ হয়ে ওঠে।  

তিনি বলেন, আমরা জরিপ করে দেখেছি চট্টগ্রামের প্রায় সব বহুতল ভবনই আগুনের ঝুঁকিতে আছে। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে ও পরে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে দুই দফায় অনাপত্তি ছাড়পত্র (এনওসি) গ্রহণ করতে হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ২৭টি শর্ত পূরণ করতে হয়। ভবন ব্যবহারকারীদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই ফায়ার সার্ভিসের ২৭টি শর্ত রয়েছে। কিন্তু অনেক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ভবনের কাজ শেষ করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ক্রেতাদের হাতে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২ 
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।