ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্ল্যানিং কমিটির যাচাই-বাছাই ছাড়াই চবিতে নিয়োগ পরীক্ষা!

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
প্ল্যানিং কমিটির যাচাই-বাছাই ছাড়াই চবিতে নিয়োগ পরীক্ষা!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের তিন পদে নিয়োগের জন্য আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনী সভা (মৌখিক পরীক্ষা) ডাকা হয়েছে। তবে প্রার্থীদের আবেদনপত্রগুলো প্ল্যানিং কমিটিতে যাচাই-বাছাই ছাড়াই নির্বাচনী সভা ডাকা হয়েছে বলে অভিযোগ কমিটির তিন সদস্যের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসরণ না করে আহ্বান করা এ নির্বাচনী সভা স্থগিতের আবেদন জানিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন বিভাগের তিন শিক্ষক। চিঠিতে সভাটি স্থগিত না করা হলে আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের তিন স্থায়ী শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন, মৌমিতা পাল ও প্রভাষক মো. মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্ল্যানিং কমিটির সভায় আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার বিষয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, নিয়োগের আবেদনপত্রগুলো প্ল্যানিং কমিটির সভায় উপস্থাপন করবেন বিভাগের সভাপতি। প্ল্যানিং কমিটি আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের যোগ্যতা, শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা ও  প্রকাশনা এসবের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠাবেন। কোনো আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হলে, এর কারণ প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করতে হবে। যদি উপাচার্য প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের সঙ্গে একমত না হন, সেক্ষেত্রে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য উপাচার্য নিজের মতামত জানিয়ে প্ল্যানিং কমিটির কাছে ফেরত পাঠাবেন। সবশেষ প্ল্যানিং কমিটি যদি পুনর্বিবেচনার বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে একমত না হয়, তাহলে এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে৷ 

বিভাগের শিক্ষকদের অভিযোগ, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে জমা পড়া আবেদনপত্রগুলো বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সভায় যাচাই বাছাইয়ের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু পরপর তিনটি সভায় আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই না করেই সভা স্থগিত করেন বিভাগের সভাপতি সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম নাজমুল ইসলাম খান।

গত ৭ ডিসেম্বর বিভাগের তিন শিক্ষক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির তৃতীয় সভায় শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভাগের সভাপতি প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই চাপ প্রয়োগ করে আরও ৫টি পদে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সদস্যদের স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।  

এদিকে, কমিটির তৃতীয় সভার সিদ্ধান্তগুলো গত ৮ ডিসেম্বর, ২১ ডিসেম্বর এবং ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পরপর তিনটি প্ল্যানিং কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে সম্মতি দেননি দ্বিমত পোষণ করা এ তিন শিক্ষক। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতকে উপেক্ষা করে তিনবারই সভা স্থগিত করেন বিভাগ সভাপতি।  

প্ল্যানিং কমিটির এ তিন সদস্য জানান, এ বিষয়ে আমরা প্রতিবারই আলোচনা করতে বললেও বিভাগের সভাপতি বিষয়টি উপেক্ষা করেন। এ নিয়ে তিনবার সভা স্থগিত করেছেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে নিয়োগ প্রার্থীদের আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করার বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়নি বলে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠান বিভাগের সভাপতি ড. এবিএম নাজমুল ইসলাম খান। যার প্রেক্ষিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই এ নির্বাচনী সভা আহ্বান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  

ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্ল্যানিং কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতকে সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ না করে বারবার সভা মুলতবি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩-অধ্যাদেশের সুস্পষ্ট লংঘন। এছাড়া প্ল্যানিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে বিভাগের তিনটি পদে নিয়োগপ্রার্থীদের আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়নি উল্লেখ করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলেন বিভাগ সভাপতি। যার ভিত্তিতে আগামী ৩০ জানুয়ারি ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী সভা ডাকা হয়েছে।  অথচ বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও প্ল্যানিং কমিটির শেষ তিনটি সভায় বিভাগের সভাপতি যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত কোন ধরনের আলোচনা করেননি।  

এ বিষয়ে জানতে বিভাগের সভাপতি ড. এবিএম নাজমুল ইসলাম খানকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি।  

তবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, সভা স্থগিতের আবেদনের চিঠিটি আমরা পেয়েছি। তবে উনারা চাইলে নিয়োগের নির্বাচনী সভা স্থগিতের কথা বলতে পারেন না। কারণ যাচাই-বাছাইয়ের যে প্রক্রিয়া, এটি প্ল্যানিং কমিটির সভায় হয়। কিন্তু উনারা এ সভায় অংশগ্রহণ করেননি। তিনটি সভাতেও যখন যাচাই-বাছাইয়ের এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন না হয়, তখন এটি নিয়মানুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন। তাই নিয়ম মেনেই এ নির্বাচনী সভা আহ্বান করা হয়েছে। কাজেই উনারা আবেদন করলেও বিষয়টি নিয়মানুযায়ী চলবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
এমএ/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।