ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রোগমুক্তি কামনায় আশ্বিনে রান্না, কার্তিকে অন্ন গ্রহণ

নিউজরুম এডিটর  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
রোগমুক্তি কামনায় আশ্বিনে রান্না, কার্তিকে অন্ন গ্রহণ অশ্বিনী কুমারদ্বয়ের ব্রত।

চট্টগ্রাম: বাংলা মাস কার্তিকের একটা সময় ছিল অভাবের দিন। গাঁয়ে গাঁয়ে প্রতিটা ভোর শুরু হতো কষ্ট নিয়ে।

চাকা ভাঙা গরু গাড়ির মতো থমকে দাঁড়াতো সময়। মাঠে আমন ধানের পাকা রঙ দেখতে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতো না।
এলাকা ছেড়ে মজুররা বেরিয়ে পড়তো দলে দলে। যেখানে ধান কাটার কাজ জুটবে, সেখানেই মিলবে তিন বেলা গামলা ভর্তি সাদা ভাত।  

সেই দিন এখন পাল্টেছে। মরা কার্তিকের আগ্রাসন আর নেই। ওই সময়কালের আগে থেকে সনাতনী পার্বন জলবিষুব সংক্রান্তি শুরু হলেও মঙ্গার দিনগুলোতে তা হয়ে উঠেছিল আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।

আশ্বিন মাসের শেষদিন ও কার্তিক মাসের প্রথম দিন ঘিরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আজও প্রচলিত আছে জলবিষুব সংক্রান্তি। মাসের প্রথম দিন সকালে সন্তানকে ভালো-মন্দ খাইয়ে মায়েরা আশা করতেন- ‘পুরো বছরটা ভালো যাবে, সন্তান থাকবে দুধে-ভাতে’।

সোমবার (১৮ অক্টোবর) সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অশ্বিনী কুমারের ব্রত পালন করেছেন। এই ব্রত ‘ব্রতের ভাতের পূজা’ নামেও পরিচিত। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে তারিখের হেরফের থাকলেও নবযুগ পঞ্জিকা মতে, এদিন ৩১ আশ্বিন। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বাংলা ১ কার্তিক সকালে খোলা হবে কলাপাতায় মোড়ানো ভাতের হাঁড়ির মুখ।  

আশ্বিন সংক্রান্তির আগে রাত জেগে বিশেষ খাবার তৈরি করেন বাড়ির নারীরা। এর মধ্যে অন্যতম গুড়মিশ্রিত নারিকেল। কার্তিকের প্রথম দিন সকালে সেই নারিকেল ও বাংলা কলা দিয়ে পূজায় নিবেদন করা পান্তা ভাত খাওয়া হয়। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দেন ব্রতের ভাত। যদিও এবার সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া তাণ্ডবের কারণে সেই আয়োজনে ভাটা পড়েছে।  

চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সময়টাতে ১৩/২১ বেজোড় সংখ্যার চাল-ডাল, শাপলার ডগা, কাঁচা কলা, পেঁপে ও নানান সবজি একসঙ্গে রান্না করা হয়। মোমবাতি বা কুপির আলোকশিখার ওপর কলাপাতা রেখে দেওয়া হয়। সকালে কলাপাতায় জমে থাকা কালি ছোটদের কপালে টিপ আকারে লাগিয়ে দেওয়া হতো, যেন কারও খারাপ দৃষ্টি না পড়ে। কালক্রমে এসব সংস্কৃতি এখন বিলুপ্তির পথে।

সনাতনী ইতিহাস মতে, স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনী কুমারদ্বয় ‘নাসত্য’ ও ‘দস্র’ হলেন সূর্যদেব ও সংজ্ঞা’র পুত্র। ঋগ্বেদ ও সংস্কৃত সাহিত্যে  তাঁদের কথা উল্লেখ আছে। মহাভারতের আদিপর্বের পৌষ্যপর্বাধ্যায়ে উপমন্যোপাখ্যানে দেব-চিকিৎসক হিসাবে তাঁদের ভূমিকার কথা জানা যায়। অভিশাপগ্রস্ত সংজ্ঞা জগজ্জননী পার্বতীর কাছে নিজের দুর্দশা থেকে মুক্তি চাইলে পার্বতী একমুষ্টি চাল দিয়ে তাকে বলেছিলেন-আশ্বিন মাসের শেষ তারিখ পূর্বরাত্রে শেষ দিবস রেখে এই চাল ভক্তিপূর্বক রন্ধন শেষে মহাদেবের অর্চনা করতে হবে এবং কার্তিক মাসের ১ম দিবসে সেই অন্ন ভক্ষণে মনস্কামনা পূর্ণ হবে। সেই নিয়ম মেনে রোগ ও অভিশাপমুক্ত হয়েছিলেন দেবী সংজ্ঞা।

এ ব্যাপারে পণ্ডিত মিঠুন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে উপোস থেকে অশ্বিনী কুমারদ্বয়ের ব্রত পালনের রেওয়াজ নেই। ভক্তি সহকারে ব্রতের ভাত খাওয়ার ফলে রোগমুক্তি হয় বলে বিশ্বাস করেন এ অঞ্চলের সনাতন সম্প্রদায়। এই সনাতন সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক প্রবাদ: ‘আশ্বিনে রাঁধে, কার্তিকে খায়/যেই বর মাগে, সেই বর পায়’।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।