ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিআরবি রক্ষায় চট্টগ্রামের ‘ঘরে ঘরে আলোর মিছিল’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২১
সিআরবি রক্ষায় চট্টগ্রামের ‘ঘরে ঘরে আলোর মিছিল’ সিআরবি রক্ষায় ঘরে ঘরে আলোর মিছিল কর্মসূচিতে খোরশেদ আলম সুজন ও অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত

চট্টগ্রাম: অর্থলিপ্সু হায়েনাদের গ্রাস থেকে সিআরবিসহ চট্টগ্রামের ভূপ্রকৃতি রক্ষার দাবিতে ‘ঘরে ঘরে আলোর মিছিল’ ব্যতিক্রমী কর্মসূচি পালিত হলো চট্টগ্রামে। লকডাউনের মধ্যে সচেতন নগরবাসী নিজ ঘরে, বিভিন্ন মোড়ে, অফিসের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে সেই ছবি সিআরবি রক্ষার দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের ডাকে শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টায় নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেন তারা।  

কর্মসূচির শুরুতে সুজন বলেন, চট্টগ্রাম সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদ-নদী, পাহাড়, ছোট ছোট টিলায় পরিবেষ্টিত মনোরম সুন্দর চট্টগ্রাম। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে চট্টগ্রাম প্রতিনিয়ত জোয়ারে ডুবছে, ভাটায় ভাসছে। চট্টগ্রামের এ প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হলে বাংলাদেশের হৃদপিণ্ড চট্টগ্রাম মৃত নগরে পরিণত হবে। চট্টগ্রাম মৃত নগরে পরিণত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এ চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দাদের জায়গা একসময় বিভিন্ন সরকারি সংস্থা নামমাত্র মূল্যে হুকুম দখলের নামে অধিগ্রহণ করেছিল। হুকুমদখলকৃত জায়গার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূপ্রকৃতি রেলওয়ের দখলে। ফয়’স লেক, সিআরবি, টাইগারপাস, জোড় ডেবা, রেলওয়ে একাডেমি, জিলাপি পাহাড়, বাটালি হিল, আগ্রাবাদ ডেবা, আমবাগানসহ সৌন্দর্যমণ্ডিত এসব জায়গা বর্তমানে রেলওয়ের দখলে রয়েছে।  

এসব জায়গা রেলের কাজে ব্যবহার করার কথা বলে অধিগ্রহণ করলেও বর্তমানে জায়গাগুলো রেলওয়ের কোনো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না বিধায় এসব জায়গা রেলওয়ে বিভিন্ন অর্থলিপ্সু হায়েনার কাছে নামমাত্র মূল্যে বেচে দিচ্ছে। এসব জায়গায় অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক স্থাপনার ফলে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হতে চলেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলে অবশিষ্ট আর কিছু থাকবে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে রেলের কর্তাব্যক্তিরা যাত্রীসেবা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে রেলের সম্পত্তি হরিলুট করে তাদের পকেট ভারী করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।  

তাদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে এবং এসব দুর্নীতিবাজ তস্করদের হাত থেকে রেলকে রক্ষা করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবিজানান তিনি।  

তিনি বলেন, এটা চট্টগ্রামের ভূপ্রকৃতি বাঁচানোর আন্দোলন। চট্টগ্রামের সব জনগণ এ আন্দোলনের সঙ্গে আছে। সুতরাং এ আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের প্রতিটি সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।  

সুজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আব্দুর রবের কবরকে যারা বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করতে চায় তারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের প্রেতাত্মা। এরা বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি করতে চায়।  

এদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।  

তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। এ মাসে বাঙালির জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা। তাই শোকের মাসে আমরা কোনো কর্মসূচি দিতে চাই না। এ মাসকে আমরা ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করতে চাই। কিন্তু জনগণের ভাবগম্ভীর্যকে কাজে লাগিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ যদি সিআরবিতে কোনো ধরনের নির্মাণকাজ করতে চায় তাহলে চট্টগ্রামবাসী লাঠি হাতে তাদের প্রতিহত করবে।  

তিনি চট্টগ্রামবাসীকে লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সিআরবি নিয়ে যদি কেউ কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে চট্টগ্রামবাসী শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তা প্রতিহত করবে।  

তিনি শুধু চট্টগ্রামের নয় সারা দেশে রেলওয়ের যত অব্যহৃত জায়গা আছে সেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, নয়তো অর্থলিপ্সু হায়েনাদের হাত থেকে এসব মূল্যবান জায়গা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সংবিধান সরকারকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়েছে এসব জায়গা জমি সংরক্ষণের। তাই দেশের ভূপ্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।  

তিনি চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে রেলের ডিজির বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রামবাসী ঝাড়ু ও জুতা নিয়ে অপেক্ষা করছে, রেলের ডিজি চট্টগ্রামে আসার দুঃসাহস দেখালে চট্টগ্রামবাসী তাকে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে।  

মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে নিজ নিজ অবস্থান, নগর ও বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্পটে নানাবিধ শ্রেণিপেশার ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মসিউর রহমান চৌধুরী, হাজি মো. ইলিয়াছ, দৈনিক আজাদীর প্রধান প্রতিবেদক হাসান আকবর, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, সৈয়দ আহমেদ কবীর, ন্যাপনেতা মিটুল দাশগুপ্ত, মিসেস তাহমিনা বেগম, আব্দুর রহমান মিয়া, রুহুল আমিন তপন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, হাজি মো. হোসেন, নগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সদস্য শওকত হোসাইন, ফরহান আহমেদ, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, কমল দাশ, আবৃত্তিকার প্রণব চৌধুরী, সংগঠক শৈবাল পারিয়াল, নগর সৈনিক লীগের আহ্বায়ক শফিউল আজম বাহার, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল কবির, মাঈনুল হক লিমন, মহিউদ্দিন শাহ, তারেক হায়দার বাবু, উজ্জ্বল সরকার, এমদাদুল হাসান বাবু, এনামুল হক মিলন, মোরশেদ আলম, শিশির কান্তি বল, কামরুল হোসেন, সমীর মহাজন লিটন, অনির্বাণ দাশ বাবু, শ্যামাপদ চৌধুরী, ফেরদৌস মাহমুদ আলমগীর, রকিবুল আলম সাজ্জী, রাজীব হাসান রাজন, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি এম ইমরান আহমেদ ইমু, সহ-সভাপতি নাঈম রনি, জয়নাল উদ্দিন জাহেদ, ইরফানুল আলম জিকু, ফরহাদ আনোয়ার চৌধুরী তপু, শেখ মহিউদ্দিন বাবু, সব্যসাচী টিটু, রাহুল দত্ত, আলবিন নূর নাহিন, শেখর দাশ প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২১
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।