ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে করোনা রোগীর শয্যা

হিসেবে আছে, বাস্তবে নেই

মিনার মিজান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২১
হিসেবে আছে, বাস্তবে নেই প্রতীকী ছবি।

চট্টগ্রাম: করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ রূপ নিচ্ছে ভয়াবহতায়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু, সংক্রমণ।

এরই মধ্যে সব হাসপাতালের শয্যা পরিপূর্ণ করোনা আক্রান্ত রোগীতে। খালি নেই আইসিইউও।
করোনা নিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য দেয় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। কিন্তু হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা নিয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যের সঙ্গে অসঙ্গতি রয়েছে বাস্তবে।  

বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে অনেক শয্যা খালি থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন।  

তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি ২৩টি হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে করোনার চিকিৎসা। সরকারি হিসেবে এসব হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ২ হাজার ৭২৮টি। এত শয্যা থাকলেও সবগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না করোনা রোগীদের চিকিৎসায়। বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই প্রতিদিন গতানুগতিক তথ্য দিয়ে যাচ্ছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।  

হাসপাতালের তালিকা সংগ্রহ করে বাস্তবে কতটি শয্যা করোনার রোগীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা জানতে অনুসন্ধান করে বাংলানিউজ। বেসরকারি ২৩ হাসপাতালের মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নেওয়া হয়।  

এতে দেখা যায়, করোনা চিকিৎসায় পার্কভিউ হাসপাতালে শয্যা বরাদ্দ রয়েছে ৯০টি। কিন্তু এ হাসপাতালে সরকারি হিসেবে শয্যা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ১০০টি। এছাড়া ম্যাক্স হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য সিট বরাদ্দ রয়েছে ৬৭টি। অথচ সরকারি হিসেবে দেখানো হয়েছে ৮০টি।  

অন্যদিকে সিএসসিআর হাসপাতালে বরাদ্দ রয়েছে ২৮ শয্যা। কিন্তু সরকারি হিসেবে রয়েছে ৯২ শয্যা। শুধু তা-ই নয় ইউএসটিসি’র বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে ৩৫০টি। এর মধ্যে করোনা রোগীর জন্য ৫৮টি শয্যা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকারি হিসেব অনুযায়ী ৩৫০ শয্যাই করোনা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।  

আবার মেট্রোপলিটন হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য ৫০টি শয্যা থাকলেও দেখানো হচ্ছে ১২০টি। ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৪৫ শয্যায় ভর্তি করা হয় করোনা রোগী। কিন্তু এই হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৮৫টি।  

হিসেবের এই গরমিলের কারণে করোনা আক্রান্ত রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে স্বজনদের।  

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু বাংলানিউজকে বলেন, শয্যা খালি আছে জেনে একজন মানুষ যাবে হাসপাতালে। কিন্তু যাওয়ার পর যখন কোনো শয্যা খালি পাবে না, তখন কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে? রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের উচিত, সঠিক সময়ে তথ্য হালনাগাদ করা।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও করোনাবিষয়ক স্বাচিপের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি হিসেবের সঙ্গে বাস্তবতার অমিল অনেকটা ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ এমন। তবে বিষয়গুলোতে আরও নজর দেওয়া জরুরি। করোনার প্রথম থেকে হয়তো এভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আপডেট করা প্রয়োজন ছিল।  

তিনি আরও বলেন, সরকারি হিসেবে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ১০০ শয্যার। কিন্তু এ হাসপাতালে ৪-৫ জন রোগী ভর্তি থাকে। আইসিইউ’র কথা বলা হলেও কোনোটিই সচল নয়। কিন্তু এ হাসপাতালের নামে সরকার বরাদ্দ দিচ্ছে।  

তবে সরকারি হিসেবে উল্লেখিত বেসরকারি হাসপাতালের ২ হাজার ৭২৮টি শয্যার সবগুলো করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য বরাদ্দ দেওয়ার তথ্যে গরমিল প্রশ্নে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বাংলানিউজকে বলেন, তালিকায় যে শয্যা সংখ্যার তথ্য দেওয়া হয়েছে তা করোনা রোগীর জন্য বরাদ্দ। বলতে গেলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাই দিচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২১
এমএম/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।