ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স 

করোনার স্যাম্পল পাঠানোর নামে টাকা নয়ছয়! 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২১
করোনার স্যাম্পল পাঠানোর নামে টাকা নয়ছয়!  ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. শফিউর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে করোনার স্যাম্পল অন্য হাসপাতালে পাঠানোর নামে ভুয়া বিল তৈরি করে অ্যাম্বুলেন্সের তেলের টাকা আত্মসাৎ, ঠিকাদার থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়, আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কর্মরত গাড়ি চালককে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার সহ নানান অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব অভিযোগ তদন্তে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি রোববার (১৬ মে) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন।

সব অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, ২০১০ সালের ১ জুলাই ডা. মোহাম্মদ শফিউর রহমান মজুমদার প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।

২০১৬ সালে চাকরি নিয়মিত হয়। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

দায়িত্ব পেয়ে ডা. শফিউর উপজেলায় কয়েকটি অনুমোদনহীন বেসরকারি ক্লিনিক উদ্বোধন করে সমালোচিত হন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানা দেওয়াল নির্মাণ না করেই ঠিকাদার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে সাবেক ইউএইচএফপিও কামরুল আজাদ ওই ঠিকাদারকে প্রত্যয়ন দেননি। অথচ বর্তমান ইউএইচএফপিও ঠিকাদারকে প্রত্যয়ন দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫০ শয্যার বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ১৫টি শয্যা সংরক্ষণ করে রাখা হলেও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে সেখানে বর্তমানে কোনও রোগী ভর্তি হচ্ছেন না। এ পর্যন্ত মাত্র ৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এই হাসপাতাল ছেড়েছেন।  

এদিকে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি চালকের অভাবে অচল পড়ে আছে। গত ২৯ এপ্রিল গাড়ি চালক মোহাম্মদ আলমগীরকে পটিয়ায় বদলি করার পর ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে করোনাকালে বেসরকারি ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রোগীদের শহরে আনতে হচ্ছে। গত ২৯ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ৫৬ জন রোগী চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়, যাদের সবাইকে আসতে হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগকৃত গাড়ি চালককে ইউএইচএফপিও ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত জিপ গাড়ি চালাতে।

সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনার স্যাম্পল কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর কাজ শুরু হয়। আর এই কাজ নিয়ে ডা. শফিউর অনিয়মের আশ্রয় নেন। অ্যাম্বুলেন্স না পাঠিয়েও ভুয়া তালিকা তৈরি করে তেলের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

গত ৮ নভেম্বর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) জয়নুল আবেদীন মাহবুবকে করোনার স্যাম্পল নিয়ে কক্সবাজার পাঠানোর তথ্য উল্লেখ করে তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকার তথ্য মতে, সেদিন জয়নুল সকাল ৯টায় কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান এবং রাত ৯টায় কক্সবাজার থেকে বাঁশখালী ফিরে আসেন। আবার একইদিন গাড়ি চালক আলমগীরকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে করোনার স্যাম্পল নিয়ে চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর আদেশ দেন ডা. শফিউর। জানা গেছে, সেদিন বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কোনও নমুনা কক্সবাজার কিংবা চকরিয়ায় পাঠানো হয়নি। অথচ ওইদিন অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর নামে ২৫ লিটার তেলের বিল করা হয়।  

প্রাপ্ত নথিতে দেখা গেছে, স্যাম্পল পাঠানোর নামে একইদিনে জয়নুল ও আলমগীরের নামে বিল তৈরি করা হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বর, ৬ অক্টোবর, ১৫ অক্টোবর, ২০ অক্টোবর, ৮ নভেম্বর, ২৩ নভেম্বর সহ বেশ কয়েকবার।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, কেউ ইউএইচএফপিও’র বিরুদ্ধে কথা বললে রোষানলের শিকার হন। শুরু হয় তাকে বদলি করার তৎপরতা। প্রতিবাদ করায় কয়েকজনকে চোখের জলে বিদায় নিতে হয়েছে। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা না হয়েও তিনি সাইনবোর্ডে নাম ও ডিগ্রির পাশে সেই পদবি লাগিয়েছেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. মোহাম্মদ শফিউর রহমান মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটি গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে শত্রুতা করছে। হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফেরাতে যখন কাজ করা হচ্ছে তখনই সদ্য বদলি হওয়া অ্যাম্বুলেন্স চালক এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। এখানে করোনা ওয়ার্ড নয়, আছে আইসোলেশন সেন্টার।  দুইজনকে একইদিনে নমুনা নিয়ে কক্সবাজার পাঠানোর সুযোগ নেই। এগুলো প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। যখন তদন্ত হবে তখন সত্যতা প্রমাণিত হবে’।  

তিনি বলেন, ‘কিছু অফিসিয়াল বিষয় থাকে যেগুলো আমরা কর্তৃপক্ষ হিসেবে সবকিছু খেয়াল নাও করতে পারি। অফিসিয়াল কোনো দুর্বলতা আছে কি-না তা পরে বুঝা যাবে। আর সিভিল সার্জন এসেছিলেন ফিল্ড ভিজিটের জন্য’।  

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সদ্য বদলি হওয়া অ্যাম্বুলেন্স চালক মোহাম্মদ আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ছোট চাকরি করি। কর্তৃপক্ষ যে আদেশ দিবেন তা আমাদের মানতে হবে। শফিউর রহমান স্যার আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন তা মিথ্যা। অ্যাম্বুলেন্সের তেলের টাকা তছরুপ করেন তিনি। আর এর দায়ভার আমার ওপর তুলে দেন। আমি কিছু বললে তিনি এ ব্যাপারে মাথা না ঘামাতে বলতেন’।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। নিজেকে বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরিচয় দেওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের তেলের টাকা নয়ছয় নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ যার বিরুদ্ধেই থাক, প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২১
এমএম/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।