চট্টগ্রাম: মানুষের কোলে পিঠে, হেসে খেলে বেড়ে উঠছে বাঘের শাবকটি। কখনো আঁচড় দেয়, কখনো ধারাল নখ লেগে ছিঁড়ে যায় জামা।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ‘জো বাইডেন’ নামের শিশুবাঘটি এভাবেই বড় হচ্ছে। কখনো দামি সোফায়, কখনো টাইলসের ঝকঝকে মেঝেতে দৌড়ঝাঁপ করছে শাবকটি। জন্মের পর থেকে বাঘিনীর দুধ পায়নি শাবকটি। এক দিন বয়সী বাঘের শাবকটির সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে ‘পরী’ নামের বাঘিনী। শাবকের জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। প্রথমে বিড়ালের আর টিনের দুধ খাওয়ানো হয়। সইলো না ছোট্ট পেটে। এরপর আনা হলো ছাগলের দুধ। মিললো স্বস্তি। প্রথম দুই মাস শুধু ছাগলের দুধ। তারপর মুরগির মাংস। আরও পরে গরুর মাংস খাওয়ানো হয় তাকে। এখন প্রতিদিন ২ বেলায় ৯০০ মিলিলিটার দুধ আর ৮০০ গ্রাম মাংস খায় ১২ কেজি ওজনের শাবকটি।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বাংলানিউজকে জানান, আফ্রিকা থেকে রাজ ও পরী নামের দুইটি বাঘ আমদানির পর তিন দফায় শাবকের জন্ম দিয়েছে। প্রথমে দুইটা বাঘিনীর জন্ম হয়-জয়া ও শুভ্রা। এর মধ্যে শুভ্রা বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া শাবকটির নাম রাখা হয় ‘করোনা’। সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর তিনটি শাবকের জন্ম হয়, মায়ের দুধ না পেয়ে রোগাক্রান্ত দুইটি মারা যায়। একটি মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হই। সেটির নাম জো বাইডেন রাখা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানাতে।
একটি বাঘের শাবক জন্মের পর চোখ বন্ধ থাকে। নড়াচড়া করে না, মুমূর্ষু। নিষ্প্রাণ মাংসপিণ্ডের মতো ছিল। সেই বাঘের শাবক বাঁচিয়ে রাখা ছিল চ্যালেঞ্জ। কারণ তার মা তাকে দুধ দিত না। আমি প্রথম দিকে টানা ৯ দিন ৯ রাত খেটে শাবকটি বাঁচাতে পেরেছিলাম। এ সময় আমার খাওয়া-দাওয়া হয়েছে শাবকটির ঘরেই। ভয় ছিল ইনফেকশনের, অসুখ-বিসুখের। তখন আমরা দিনে ৬ বার ছাগলের দুধ সিদ্ধ করে খেতে দিতাম। এখন দিনের বেলা মায়ের কাছাকাছি একটি খাঁচায় রাখছি শাবকটিকে। যাতে তাদের মধ্যে মায়া, মমত্ববোধের সৃষ্টি হয়। রাতের বেলা আলাদা রাখি। যোগ করেন ডা. শুভ।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন বাঘ শাবকটি আমি আর কেয়ারটেকার মামুন ছাড়া কারও কাছে ঘেঁষে না। অপরিচিতদের দেখলে তেড়ে আসে, বিরক্ত হয়। এমনকি রেগে গর্জন করতে থাকে। চকচকে ধারাল দাঁত আর লকলকে জিহ্ববা দেখে ভয় পান অনেকেই।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসচিব মো. রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, চিড়িয়াখানার জায়গা সম্প্রসারণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, পাহাড়ে সর্পিল সিঁড়ি, নতুন নতুন পশু-পাখি সংগ্রহ, শিশু-কিশোরদের কাছে আরও আকর্ষণীয় ও শিক্ষণীয় করতে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শিগগির জিরাফসহ নতুন কিছু প্রাণী আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আশাকরি ১৫ দিনের মধ্যে শাবকটিকে মায়ের পাশের খাঁচায় দিতে পারবে।
বর্তমানে বাঘ, সিংহ, জেব্রা, ময়ূর, কুমির, গয়াল, বানর, উল্লুক, ভালুক, চিত্রা ও সাম্বার হরিণ, চিল, শকুন, শজারু, উটপাখি, ইমু, শেয়াল, মেছোবাঘ, অজগর, গন্ধগোকুল, পায়রা, টার্কি, তিতিরসহ ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি রয়েছে।
>> সবুজ পাহাড়ে রঙিন সিঁড়ির ঝলক চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২১
এআর/টিসি