ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

লালদিয়ার চরের স্বার্থান্বেষীদের তালিকা করা হয়েছে: নৌ প্রতিমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
লালদিয়ার চরের স্বার্থান্বেষীদের তালিকা করা হয়েছে: নৌ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

চট্টগ্রাম: গুটিকয়েক মানুষের জন্য বন্দরের সুনাম নষ্ট বরদাশত করা হবে না জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। উচ্ছেদ চলমান প্রক্রিয়া।

লালদিয়ার চরের ভাড়াটিয়া দিয়ে যারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছে সেই স্বার্থান্বেষীদের তালিকা করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবেশমুখ। এটা আমাদের সমৃদ্ধ রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে লাইফ লাইন। এ বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) কাজ শেষ পর্যায়ে। আমাদের বে টার্মিনালের অনেক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, সেগুলো চলমান আছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে সম্পন্ন করব। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার মতো পৃথিবীর কোনো বন্দরে এত জনবসতি বা যানবাহন চলাচল করে না। আমরা সেই জায়গাগুলো আধুনিকায়ন করতে যাচ্ছি। বিদেশিরা যখন আসেন, যখন দেখেন  বন্দরের মধ্যে এত চলাচল, এত বস্তি, এত বাড়িঘর তখন আমাদের বন্দর প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এর আগে অনেক জায়গা পরিষ্কার করেছি। এখন লালদিয়ার চরে পদক্ষেপ চলছে। এর আগে মহামান্য আদালত বন্দর চেয়ারম্যানকে পর্যন্ত কোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সেখানে বলেছেন।  

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন। আমরা একটা জিনিস বলতে চাই- অবৈধভাবে কেউ কোনো কিছু দখল করে রাখার সুযোগ নেই। কেউ যদি অপারগ হয়, কারও যদি কোনো ঠিকানা না থাকে    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তাদের ঠিকানা দেবেন। কিন্তু অবৈধভাবে যারা দখল করে থাকবেন তাদের আমরা উচ্ছেদ করব। শুধু তাই নয়, যারা এতদিন যাবত এগুলো দখল করে রেখে ফায়দা লুটেছেন তাদেরও তালিকা তৈরি করেছি। সময় নিয়ে সেই সব চিহ্নিত অপরাধীদেরও আইনের আওতায় আনব। কিন্তু এ বাংলাদেশের সংবিধান মানুষের যে অধিকার দিয়েছে তা বর্তমান সরকার খর্ব করবে না।  

পুনর্বাসন প্রসঙ্গে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুনর্বাসন আমরা তাদেরই করব যারা গৃহহীন। যারা সচ্ছল যারা চলতে পারে তাদের পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই। আমরা যাদের পুনর্বাসন করব সেই তালিকা হয়েছে। যারা এখন আছে অধিকাংশই ভাড়াটিয়া। কারা এ ধরনের সুযোগ নিয়ে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে সেটির তালিকা করেছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যারা বন্দর এলাকার জমি ব্যবহার করে অর্থ আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।     

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উচ্ছেদ একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা বলেছি, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার আমরা হরণ করব না। তবে বন্দর এলাকা পরিষ্কার করে আধুনিক বন্দর গড়তে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা কাউকে প্রভাবশালী মনে করছি না। আমরা মনে করি সরকার প্রভাবশালী। সরকার ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবে। প্রভাবশালীর কথা বলে সুযোগ নেওয়ার উপায় নেই। চট্টগ্রামবাসীও চায় চট্টগ্রাম বন্দর আরও আধুনিক হোক। আপনারা জানেন লয়েডস লিস্টে কনটেইনার পোর্টে বিশ্বের ৫৮তম জায়গায় নিয়ে গেছি চট্টগ্রাম বন্দরকে। আমরা গ্লোবাল ভিলেজে চলে গেছি। আমাদের আরও জায়গা দরকার। আরও সুস্থ পরিবেশ দরকার। আমাদের করতে হবে। সাংহাইসহ উন্নত বন্দরের সঙ্গে আমরা তুলনা করতে শুরু করে দিয়েছি। গুটিকয়েক মানুষের জন্য বন্দরের সুনাম নষ্ট হবে কেউ তা বরদাশত করবে না। বর্তমান সরকার মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। সংবিধানে মানুষের যে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে ইতিমধ্যে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে।  

সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা লালদিয়ার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের পক্ষে কথা বলা প্রসঙ্গে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা কথা বলছেন তারা হয়তো স্থানীয়ভাবে তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ওঠাবসা করেছেন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে তারা কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবতা হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা যদি আধুনিক করতে চাই তাহলে এসব পদক্ষেপের বিকল্প নেই।  

বে টার্মিনাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ টার্মিনাল পিপিপি মডেলে হচ্ছে। অনেক প্রস্তাবনা এসেছে। বন্দর ও দেশের স্বার্থ দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যদি সেই স্বার্থ পূরণ না হয় তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আছে। আমরা সেই জায়গায় যাবে। আমাদের টার্গেট নির্ধারণ করা আছে ২০২৫ সাল। আশাকরি এর মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পারব।  

আমরা যেহেতু বে টার্মিনালে দৃষ্টি দিয়েছি কাজেই লালদিয়ার দিকে তাকাব না। পিসিটি হয়ে গেছে। বে টার্মিনাল বড় প্রকল্প।  অর্থের অপচয়ের পক্ষে নই। দেশের টাকা । লালদিয়ার জায়গা বন্দরের কাজেই লাগবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে না। একটা সময় বন্দরের সক্ষমতা ছিল না তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেই সুবিধা দিয়েছিলাম। এখন বন্দরের সক্ষমতা আছে। বাংলাদেশ এখন ঈর্ষণীয় জায়গায় চলে গেছে অর্থনীতির ক্ষেত্রে।      

এ সময় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, সদস্য মো. কামরুল আমিন, সচিব মো. ওমর ফারুক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
এআর/এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।