ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হালদার পাড়ে বসবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
হালদার পাড়ে বসবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল প্রতীকী ছবি।

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী, যেখান থেকে রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে এ নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে সরকার।

 

হালদার পাড়ে যে অংশে রাউজান সীমান্ত পড়েছে সে অংশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এ ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জাতির জনকের ম্যুরালটি তৈরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও হালদা গবেষক প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।

ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করার জন্য দীর্ঘ ২০ বছর ধরে দাবি করে আসছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করার মাধ্যমে হালদা নদী তার ঐতিহ্যে ফিরে পেয়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে হালদা নদী এশিয়া মহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। খাগড়াছড়ির পাতাছড়া থেকে নেমে আসা একশ ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীতে প্রাকৃতিকভাবে চার প্রজাতির মা মাছ ডিম ছাড়ে। এই নদী থেকেই দৈনিক ১৮ কোটি লিটার পানিও সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রতিবছর মা মাছ এখানে অবাধে রেণু (ডিম) ফোটাতে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নেয়। প্রাকৃতিকভাবে মা-মাছ ডিম ছাড়ে বলে দুই পাড়ের মানুষকে সমৃদ্ধ করছে এ নদী। জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান ৮০০ কোটি টাকা। ফলে মৎস্য ও হালদা নদীপ্রেমিরা ‘হালদা নদী রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে নদীটিকে অভয়াশ্রমসহ জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছিল।

হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া থেকে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এলাকায় নদীর পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে শিল্প-কারখানা। প্রতিনিয়ত কারখানার দূষিত বর্জ্যে হালদায় মাছ মারা যাওয়ার ঘটনায় পরিবেশবিদ ও নদী গবেষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাদের মতে, হেরিটেজ ঘোষণায় হালদা নদীর পরিচিতি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। হালদায় মাছের অভয়াশ্রমের পাশাপাশি প্রকৃতিতে আসবে নতুন প্রাণ।

জানা গেছে, হালদা নদীর মদুনাঘাট থেকে সর্তার ঘাট পর্যন্ত অংশে সরকারি জায়গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করা হবে। এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি কি রকম হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে হালদার পাড়ের যে পাশে রাউজান অংশ, সেখানে ম্যুরালটি হবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে এই নদীটা বিশেষ মর্যাদা পাবে। পাশাপাশি হালদা নদী আরও বেশি সুরক্ষিত থাকবে।  

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশে ৭৬১টি নদী রয়েছে। যার মধ্যে হালদাই একমাত্র নদী যেখানে রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। ১৯৪৫ সালে সালে এ নদীর রেণু পোনার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার। ২০০৪ সালে এসে এ মাছের ডিমের পরিমাণ কমতে কমতে ২০ কেজিতে চলে আসে। পরে সরকারের নানান কার্যকরী উদ্যোগে রেণু পোনার পরিমাণ বাড়তে থাকে। হালদা একটি ইউনিক নদী। যে নদীতে ডলফিন আছে, বুঝতে হবে সেই নদীতে দূষণ নেই। এরা প্রচুর মাছ খায়। মাছ না থাকলে এরা থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।