ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সন্ত্রাসমুক্ত আগ্রাবাদ চান ভোটাররা

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
সন্ত্রাসমুক্ত আগ্রাবাদ চান ভোটাররা আগ্রাবাদ এলাকা। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: উত্তর আগ্রাবাদের মিস্ত্রিপাড়া এলাকার ৬০ বছর বয়সী আবুল কালাম। একটি স্কুলের সামনে ১০-১২ জন কিশোরের আড্ডা দেখিয়ে বললেন, এরা প্রায় সময় এখানে আড্ডা দেয়।

করোনার আগে স্কুল যখন খোলা ছিল তখন ক্লাস চলাকালীনও তাদের আড্ড আর হইহুল্লোড় বন্ধ ছিল না। কেউ বাধা দিলে বা নিষেধ করলে উল্টো তাদের ওপর তেড়ে যেত তারা।

তিনি বলেন, শুধু মিস্ত্রিপাড়া নয়, আগ্রাবাদে কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস আর মাদক ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। প্রশাসনের ভূমিকাও তেমন চোখে পড়ে না। তাই এবার যিনি আগ্রাবাদকে সন্ত্রাসমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেবেন তাকেই আমরা ভোট দেব।

আবুল কালামের মতো উত্তর ও দক্ষিণ আগ্রাবাদের সব ভোটার সন্ত্রাস এবং মাদকমুক্ত এলাকা চান।  

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরের প্রায় ৫০০ জায়গায় মাদক বেচাকেনার মধ্যে বরিশাল কলোনি, কদমতলী বাস টার্মিনাল, পাহাড়তলী, টাইগারপাসের নামের সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ আগ্রাবাদের নামও আছে।

উত্তর আগ্রাবাদ থেকে দক্ষিণ আগ্রাবাদে মাদকের কারবার কম হলেও কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাস দুই জায়গাতেই বেশি। এখানে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা যেমন বেশি তেমন মাদকসেবীর সংখ্যাও। এসব মাদকসেবীই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তুচ্ছ কারণে খুনও করছে।  

নগরের এসব জায়গায় ২০২০ সালে খুন হয়েছে প্রায় ৪৫ জন। এর মধ্যে আগ্রাবাদে সরাসরি মাদক, সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাংয়ের কারণে খুন হন ৩ জন।  

সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আগ্রাবাদের পাশের এলাকা সদরঘাট থানার অধীন। ২৮ নম্বর পাঠানটুলী, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের কিছু অংশও আগ্রাবাদে। বাণিজ্যিক এলাকা, আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক সংগঠন, সরকারি অফিস, অনেক বিপণিকেন্দ্র মিলে দারুণ ব্যস্ত এলাকা।

এখানে আছে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর, জাম্বুরি পার্ক, আগ্রাবাদ ডেবা, শিশুপার্কসহ অনেক কিছু। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত জমে ওঠে ফুটপাতের বাজার। নৌঘাট ও বন্দরের ট্রান্সপোর্ট জোন এলাকা হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকাটি হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসের জনপদ। প্রায় ঘটে সংঘর্ষ, একের পর এক হত্যাকাণ্ড। গ্রুপে গ্রুপে অস্ত্রের ছড়াছড়ি-তো আছেই।  

২০২০ সালের মে মাসে নগরের ডবলমুরিং থানাধীন হাজিপাড়া এলাকায় রাজু আহম্মেদ নামের একজন রিকশাচালককে হত্যা করে একদল কিশোর। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাই মাদকসেবী ছিল। মাদকসেবীরা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে খুন করছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ওই বছরের জুনে আগ্রাবাদের হাজিপাড়া এলাকায় মাদক কারবারিদের ছুরিকাঘাতে মীর সাদেক অভি ওরফে অভি মীর (২৪) নামের এক ছাত্রদল কর্মী খুন হন। সর্বশেষ নভেম্বরে আগ্রাবাদে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত যুবলীগ কর্মী মারুফ চৌধুরী মিন্টু খুন হন।  

এ ছাড়া আগ্রাবাদ এলাকায় ধর্ষণের ঘটনাও কম নয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আগ্রাবাদে সুপারিওয়ালা পাড়ায় এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনাও আলোচিত একটি ঘটনা।

হাজিপাড়া এলাকার দোকানদার রুবেল কান্তি রুদ্র বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র আসে মেয়র যায় কিন্তু আগ্রাবাদে সন্ত্রাস, মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম কমে না। নির্বাচনের আগে সবাই সন্ত্রাসমুক্ত আগ্রাবাদ উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আর কারও খবর থাকে না। কাউন্সিলরাও এখানে অসহায়। তাই যিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন, তার প্রতি অনুরোধ নির্বাচিত হলে যেন আগ্রাবাদকে সন্ত্রাসমুক্ত করেন।

সন্ত্রাসমুক্ত আগ্রাবাদ করার ঘোষণা দুই প্রার্থীর

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন আগ্রাবাদকে সন্ত্রাসমুক্ত ঘোষণা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সম্প্রতি রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শুধু আগ্রাবাদ নয়, পুরো চট্টগ্রামে সন্ত্রাস, মাদক ও কিশোর গ্যাংমুক্ত করব। কারণ আমার রাজনৈতিক জীবন ৫২ বছরের। এ ৫২ বছরে কারও সঙ্গে আপস করিনি। নির্বাচিত হলে প্রতিটি ওয়ার্ডের মানুষ নিয়ে সন্ত্রাসমুক্ত চট্টগ্রাম গড়ব।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, উন্নয়নের অন্তরায় সন্ত্রাস। মেয়র নির্বাচিত হলে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আগ্রাবাদের পাশাপাশি পুরো চট্টগ্রামকে সন্ত্রাসমুক্ত করব।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।