ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষার দাবিতে মশাল মিছিল

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষার দাবিতে মশাল মিছিল জেএম সেন ভবন রক্ষা ও জাদুঘর নির্মাণের দাবিতে মশাল মিছিল। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষায় অবিলম্বে সরকারি ঘোষণা এবং বাড়িটি থেকে ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদের দাবিতে মশাল মিছিল হয়েছে। ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সচেতন নাগরিকবৃন্দ’র ব্যানারে রোববার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে নগরের চেরাগি পাহাড় মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে জেএম সেন ভবনে শেষ হয়।

 

সমাবেশ ও মশাল মিছিলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি অংশ নেন। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে বাড়িটি জাদুঘর ঘোষণা করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়।

 

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে শরীফ চৌহান বলেন, আমাদের দাবির যৌক্তিকতা সরকার ইতিমধ্যে মেনে নিয়েছে। যতদূর জেনেছি, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপ্লবীদের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করবে। আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছি তার ধারাবাহিকতায় আজকের এ কর্মসূচি। অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত নাগরিকদের পক্ষে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন। যদি সেই সীমার মধ্যে সব দাবি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেব। যাত্রামোহন সেনের বাড়ি রক্ষার দাবিতে চট্টগ্রামের নবীন-প্রবীণ শ্রেণিপেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ।  

মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বারবার বলার পরও দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো সংরক্ষিত হচ্ছে না। সবশেষ চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটিও দখল করার পাঁয়তারা চলছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা করে এগিয়ে নিতে হবে। এ বাড়ি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।  

মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যখন দেশ মানবিক বাংলাদেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের ঐতিহ্যের ওপর হামলা হয়েছে। যাত্রামোহন সেনের বাড়ির সঙ্গে এ অঞ্চলের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত। যারা বাড়িটি ভাঙার মতো কাজ করেছে তারা ন্যক্কারজনক হামলা করেছে। এই ঐতিহাসিক স্থাপনা রক্ষায় আমরা সবসময় সোচ্চার থাকব।  

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি তাপস হোড় বলেন, ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত যাত্রামোহন সেনগুপ্ত, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত এবং নেলী সেনগুপ্তার স্মৃতি বিজড়িত এ বাড়ি ভূমিদস্যুরা ভাঙতে উদ্যত হয়েছে। ভাঙা ঠেকানো গেলেও ভূমিদস্যুরা এখনো ওই বাড়িতে অবস্থান করছে। সরকারের কাছে দাবি অনতিবিলম্বে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে বাড়িটি জাদুঘর করা হোক এবং সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। আমাদের প্রত্যাশা সরকার এ মানবিক উদ্যোগটি দ্রুত নেবে।
ন্যাপ’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশগুপ্ত বলেন, কিছু ভূমিদস্যু এবং একশ্রেণির দালাল স্বাধীনতাবিরোধী মিলে যাত্রামোহন সেনের বাড়িটি আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে। চট্টগ্রামের প্রগতিশীল মানুষ বাড়িটি রক্ষায় সোচ্চার হয়েছেন। স্পষ্টভাবে বলতে চাই গুটিকয়েক ধান্ধাবাজ যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের গ্রেফতার করে বাড়িটি রক্ষা করতে হবে।  

সাংস্কৃতিক সংগঠক ও প্রমার সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, আমরা বলি সূর্য সেনের- প্রীতিলতার বীর চট্টলা। কিন্তু তাঁদের কোনো স্মৃতিই আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনি। এমনকি পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবটিও জাদুঘর করা হয়নি। চট্টগ্রামের একটি বধ্যভূমিও যথাযথ মর্যাদায় রক্ষা করতে পারিনি। কিছু ভূমিদস্যু বাড়িটি দখল করে এর সামনের অংশ ভেঙে ফেলেছে। প্রতিবাদের মুখে তারা দখল হয়ত বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। সরকার আশ্বাস দিয়েছে এক মাসের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে। সেই সময় শেষের পথে। সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই যথাযথ উদ্যোগ নিন। চট্টগ্রামে কোনো নিদর্শন কোনো স্থাপনা দখলের পাঁয়তারা করলে অবশ্যই নাগরিকরা আন্দোলনে শামিল হবে।  

সাংবাদিক প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে অংশ নেন নাট্যজন-সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজী, অধ্যক্ষ সুকুমার দত্ত, অ্যাডভোকেট চন্দন বিশ্বাস, নাট্য ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল পাশা, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালিত, কাজল চৌধুরী, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুবেল পাল, ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলার সদস্য সুপায়ন বড়ুয়া, সংগঠক শিমুল দত্ত, সিপিবি জেলা কমিটির সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য, হিন্দু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি প্রদীপ দে, শৈবাল পারিয়াল, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি এ্যানি সেন, বিপ্লবী ঘোষ, কাবেরী আইচ, সোমা মুৎসুদ্দি প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।