ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চসিক নির্বাচন 

প্রধান দুই দলের ছায়ায় হারিয়ে যায় অন্যরা

মিনার মিজান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
প্রধান দুই দলের ছায়ায় হারিয়ে যায় অন্যরা ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জোহরা বেগম। সামলাচ্ছেন সংসার।

নানা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে হয় তাকে। বাসা থেকে বের হলেই চোখে পড়ে বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টার।
 

প্রশ্ন ছিল, এবারের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কত জন মেয়র আছেন? জবাবে তিনি জানালেন দুইজন। যদিও মেয়র পদপ্রার্থী ৭ জন।  

একই অবস্থা নতুন ভোটার হওয়া অপর্ণা বড়ুয়ার। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন বলে আগ্রহের শেষ নেই তার। নগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও তিনিও জানেন না সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে কতজন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। আবার দুই মেয়র প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীকেও চেনেন না তিনি।

শুধু জোহরা বেগম কিংবা অপর্ণা বড়ুয়া নন, নগরের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রার্থী সম্পর্কে ধারণা নেই। প্রধান দুই দল ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী সম্পর্কে জানেন না অনেকেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশিরভাগ প্রার্থী নিজেকে মেয়র কিংবা কাউন্সিলর পরিচয় দিতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাই তেমন প্রচারণায় না থাকলেও কমিশনের খাতায় নাম তোলাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় তেমন পোস্টার বা প্রচারপত্র নেই অন্য ৫ মেয়র প্রার্থীর। ফলে অনেকটাই আলোচনার বাইরে আছেন এসব প্রার্থীরা। এছাড়া প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের গণসংযোগ করতে দেখা গেলেও অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি।  

ভোটাররা জানান, শুধু মেয়র প্রার্থী নয়- সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকে প্রচারণায় বের হন না। শুধুমাত্র পোস্টার ঝুলিয়ে দায় সেরেছেন। এছাড়া পূর্বে একাধিকবার সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়াদের পরিচিতি থাকলেও নতুন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে ধারণা নেই। এমনকি কে কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তাও জানেন না অনেক ভোটার।

‘ভোটাররা প্রার্থীদের চিনতে না পারা কিংবা কে কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তা জানতে না পারা’ কার ব্যর্থতা? জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী বাংলানিউজকে বলেন, প্রার্থীদের অবশ্যই ভোটারদের কাছে নিজের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। তা না হলে প্রার্থীরা ব্যর্থ। এছাড়া বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় অন্যান্য প্রার্থীদের প্রতি ভোটারদের আগ্রহ তেমন একটা নেই। গণমাধ্যমগুলোও অন্য প্রার্থীদের তেমন একটা গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে না। ফলে প্রধান দুই দলের ছায়ায় হারিয়ে যায় অন্যরা। এছাড়া আরও একটি বড় কারণ হতে পারে, নিজেদের প্রার্থী পরিচয় দিতেই অনেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া আখতার বাংলানিউজকে বলেন, ভোটের প্রতি মানুষের তেমন একটা আগ্রহ নেই। তাই মানুষ এসবে নজর দিতে চান না। তাছাড়া প্রার্থীদের অনেকে ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। ফলে ভোটাররাও একপ্রকার অনিহায় ভুগছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আমির মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে অন্যান্য প্রার্থীদের প্রতি সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কম। এক্ষেত্রে প্রার্থীরই দায়িত্ব- ভোটারের কাছে নিজের পরিচিতি তুলে ধরা।  

তিনি আরও বলেন, প্রার্থীরা অনেকে মনে করেন প্রার্থী হতে পারাটা একটি গর্বের। কারণ পরবর্তী কোনো এক সময় বলার সুযোগ হয় তৎকালীন সময়ের প্রার্থীর সঙ্গে আমিও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। অর্থাৎ প্রার্থীতা সম্মান বাড়ানোর মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর পদে ১৭২ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন সহ মোট ২৩৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র পদে নির্বাচন করছেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপি’র প্রার্থী (ধানের শীষ) ডা. শাহাদাত হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী (হাতি প্রতীক) খোকন চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর প্রার্থী (মোমবাতি) এম এ মতিন, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির প্রার্থী (আম) আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর প্রার্থী (চেয়ার) মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী (হাতপাখা) মো. জান্নাতুল ইসলাম।  

ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ৪১টি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭৩৫টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এদের মধ্যে নারী ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
এমএম/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।