ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্ক্র্যাপের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধির প্রভাব রডের বাজারে

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
স্ক্র্যাপের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধির প্রভাব রডের বাজারে রডের দাম বাড়ছে।

চট্টগ্রাম: বিশ্ববাজারে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও পুরোনো জাহাজের দাম বাড়ছে। বাড়ছে ইস্পাত শিল্পের বিভিন্ন কেমিক্যালের দামও।

ফলে করোনা প্রথম ঢেউ শেষে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে রডের চাহিদা বাড়লেও শঙ্কায় ইস্পাত কারখানাগুলো। ইতিমধ্যে টন প্রতি ৩-৪ হাজার টাকা বেড়েছে রডের দাম।
 

চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক ও কেএসআরএমের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বাংলানিউজকে জানান, সাম্প্রতিক সময় বিশ্ববাজারে ইস্পাত স্ক্র্যাপের তীব্র ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই ক্রমাগত বাড়ছে দাম। বিগত দুই বছর স্ক্র্যাপের দাম অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এখনো দাম বৃদ্ধির সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে বিশ্ব বাজারে। ৩০০ ডলার থেকে গত এক মাসে স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে টন প্রতি ৩৯০ ডলারে। অর্থাৎ বেড়েছে ৯০ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার টাকা।

তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো- আশঙ্কাজনকভাবে স্ক্র্যাপের ঘাটতি। অথচ ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্য এবং পার্সেল বুকিংয়ের জন্য অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। চীন ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা তাদের দেশে স্ক্র্যাপ আমদানির অনুমতি দেবে যা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশে ইস্পাত উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বজায় রাখাও কঠিন হয়ে পড়বে। এই প্রভাব পড়েছে আমাদের স্থানীয় বাজারে। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে রডের দাম নির্ধারণ না করা হলে ইস্পাত খাত হয়ে পড়বে স্থবির। অথচ এসব শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর রয়েছে বাড়তি করের বোঝা।

বিএসআরএম স্টিলের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালে লকডাউনের সময় রডের চাহিদা ও দাম দুটোই কমে যায়। দেশে নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ ছিল। এখন স্থানীয় স্ক্র্যাপের দামে টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা এবং আমদানি করা স্ক্র্যাপে ১২০ ডলার বেড়েছে। তাই আমাদের ৫০০ গ্রেডের সর্বশেষ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬১ হাজার টাকা।  

গোল্ডেন ইস্পাতের পরিচালক মো. সারোয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বজুড়ে স্ক্র্যাপ সংকট চলছে। প্রতিদিনই টন প্রতি ১০-১৫ ডলার করে বাড়ছে। এ সপ্তাহে আমরা যে স্ক্র্যাপের বুকিং দিচ্ছি সেটি শিপমেন্ট হবে ক্রিসমাসের পর জানুয়ারিতে। দেশে সেই চালান পৌঁছবে ফেব্রুয়ারিতে। পাশাপাশি ভারত থেকে ইস্পাত শিল্পের যে কেমিক্যাল আনা হয় তারও দাম বেড়েছে। সব মিলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে টন প্রতি প্রায় ৭ হাজার টাকা।  

তিনি বলেন, জাহাজভাঙা শিল্প থেকে যে স্ক্র্যাপ পাওয়া যেত সেখানেও সংকট চলছে। আগে যেখানে মাসে ১০-১৫টি জাহাজ আনা হতো কাটার জন্য এখন তা ৫-৬টিতে নেমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যে স্ক্র্যাপ জাহাজের দর বেড়েছে, এখন টনপ্রতি ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এখন আমরা ৫৮ হাজার টাকায় প্রতিটন রড বিক্রি করছি। যদি স্ক্র্যাপের সরবরাহ স্বাভাবিক না হয় তবে অনেক কারখানাই নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনে হিমশিম খাবে।  

জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারে রডের দাম বাড়ছে। নতুন এলসির স্ক্র্যাপে তৈরি রড বর্তমান দামে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। গতকাল আমরা ‘জিপিএইচ স্পেশাল’ গ্রেডের রড ৫৭ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। দাম, উৎপাদন এসব নির্ভর করবে চাহিদা ও জোগানের ওপর।   

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বড় ইস্পাত কারখানাগুলোর সুযোগ আছে মধ্যপ্রাচ্য, লাওস, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, চীন, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্ববাজারে ইস্পাতসামগ্রী রফতানির। এর জন্য দরকার আন্তর্জাতিক মানের রড তৈরি। জিপিএইচ ইতিমধ্যে চীনে বিলেট রফতানি করেছে।     

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।