চট্টগ্রাম: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর দেশের অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও (চবি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, তাই শিক্ষার্থীদের পদচারণাও নেই।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আলম চৌধুরী কাটা পাহাড় দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন খাদের কিনারায় বসে একটি বানর হাই তুলছে। সেই মুহূর্তের ছবি তুলে তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেন।
তিনি লিখেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড়ের খাদে বানর মহাশয়। খাদের কিনারে বসে যেভাবে হাই তুলছিলো মনে হয় রাতে ঠাণ্ডায় ঘুম ভালো মতো হয়নি। ক্ষুধার্ত ও শীতার্ত দেহে বানরটিকে কাবু মনে হয়েছে। কুশলাদি জিজ্ঞাসার একফাঁকে ছবিগুলো নিলাম। মঙ্গলবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে।
ঠিক এক ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে দুপুর ১২টার দিকে কাটাপাহাড় এলাকায় বনমোরগেরও দেখা পান বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ভেতরে কয়েকটি পাহাড়ে তিন প্রজাতির বানরের আধিক্য ছিলো। লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, পিগটেল বানর দাপিয়ে বেড়াতো পুরো ক্যাম্পাস। কিন্তু এখন এসব বানর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এমনকি ২০১০ সালের আগেও ক্যাম্পাসে হরিণের বিচরণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। এই প্রাণীও এখন খুব একটা দেখা যায়না।
২০০৮ সালে প্রকাশিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী এখানে ২৭ প্রজাতির প্রাণীর কথা জানা গেলেও এখন মাত্র ১৫টি প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। বাকি ১২ প্রজাতির প্রাণীই বিলুপ্ত।
বন্যপ্রাণী হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা গাছ কাটা, পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের পদচারণাকে দায়ী করেছেন। তবে যখনই ক্যাম্পাস নিরব থেকেছে অর্থাৎ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে তখনই এসব প্রাণী আবারও রাজত্ব করছে।
চবির এক নম্বর গেইট এলাকার বাসিন্দা আসাদুর রহমান বাংলানিউকে বলেন, করোনা ভাইাসের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার কয়েক মাসের মাথায় হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতীর প্রাণীর দেখা মিলেছে। বিশেষ করে সকাল ৭টার দিকে কাজে যাওয়ার সময় এসব প্রাণীর দেখা মিলে। এছাড়া সন্ধ্যার আগে নানান প্রজাতীর পাখির বিচরণ হয় গাছে গাছে। আর রাতে শিয়াল-তো আছেই।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ আসমত বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাস অনেকদিন ধরে বন্ধ। এ জন্য বানর, হরিণের দেখা মিলছে। কারণ ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনেক গাছও নতুনভাবে জন্মাচ্ছে। পাখিরাও ক্যাম্পাসজুড়ে বিচরণ করছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রাণীর জন্য ‘সুপার হট স্পট’। কারণ, ছোট্ট এ জায়গায় যে পরিমাণ প্রাণী বসবাস করে-তা অবিশ্বাস্য। ক্যাম্পাস খুললেও যদি আমরা গাছ না কাটি, পাহাড় কেটে সড়ক তৈরি না করি তাহলে বন্যপ্রাণী বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
ক্যাম্পাসে যে পরিমাণ সিএনজি অটোরিকশা, বাস, গাড়ি চলাচল করে; এসব যানবাহন থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। আমরা যদি এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব। বলেন গাজী সৈয়দ আসমত।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
জেইউ/এসকে/টিসি