চট্টগ্রাম: চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেড়ে যাওয়া এবং নিম্নমানের কিছু পেঁয়াজ আমদানির কারণে লোকসান দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তে অনেক পেঁয়াজে পচন ধরেছে।
নামমাত্র মূল্যে এসব পেঁয়াজের কিছু বিক্রি হলেও বাকিগুলো রাতের আঁধারে ফেলা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের আবর্জনার গাড়িতে।
মোহাম্মদীয়া বাণিজ্যালয়ের মালিক হাজি মিন্টু সওদাগর বাংলানিউজকে বলেন, অনেক পেঁয়াজ আমদানিকারক এখন লোকসান দিচ্ছেন। সমুদ্র পথে পেঁয়াজ আমদানি শুরুর মাসে আড়তদারেরা আমদানিকারকের লোকজনের কাছে ধন্না দিত। এখন উল্টো আমদানিকারকের লোকজন আড়তে আড়তে এসে ধন্না দিচ্ছে পেঁয়াজ রাখার জন্য।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের কিছু পেঁয়াজ লতা (গাছ) হয়ে গেছে। তুরস্কের কিছু পেঁয়াজ নিম্নমানের পড়েছে। আবার কিছু রেফার (শীততাপ) কনটেইনারে বৈদ্যুতিক গোলযোগ বা বৈরী আবহাওয়া, কনটেইনার খোলার পর খোলামেলা, বাতাস চলাচলের জায়গায় না রাখাসহ নানা কারণে পচন ধরেছে। এসব পেঁয়াজ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। যেগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলো দুর্গন্ধ ছড়ানোর আগেই ফেলে দেওয়া হচ্ছে সিটি করপোরেশনের আবর্জনার গাড়িতে। সব মিলে লোকসানের শেষ নেই ছোট ছোট আমদানিকারকের।
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ রসুন আদার বড় বিপণিকেন্দ্র হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী। সরবরাহও প্রচুর। মিয়ানমারের ভালো মানের পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা, অঙ্কুর বের হওয়া পেঁয়াজ ২০-২২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ২৫-৩২ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ২০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, পচন ধরা পেঁয়াজ, লতা হওয়া পেঁয়াজ ফেলে না দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গরিব মানুষদের বিনামূল্যে দিতে পারতেন আমদানিকারকরা। এখন একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে খাদ্যপণ্য নষ্ট হচ্ছে। যা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হলে দাম কমবে এটা স্বাভাবিক। তাই আমদানির ক্ষেত্রেও সুপরিকল্পনা থাকতে হবে।
৪৮ হাজার ৩৮৯ টন পেঁয়াজ খালাস
ভারত রফতানি বন্ধের পর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়। রোববার (১৫ নভেম্বর) পর্যন্ত মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর, চীন, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে আসা ৪৮ হাজার ৩৮৯ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র ইস্যু করেছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র।
এ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্র থেকে ৪৭৮টি আইপি ইস্যু করা হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৭৮৮ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য। এর বাইরে ঢাকা থেকেও অনেক আইপি ইস্যু করা হয়েছে।
পাঁচ শিল্পগ্রুপের পেঁয়াজ নিচ্ছে টিসিবি
দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপের পেঁয়াজের চালানও আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপ ও বিএসএম গ্রুপের আনা প্রায় ৬ হাজার টন পেঁয়াজ বুঝে নিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
টিসিবির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের জামাল উদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মাসের শুরুতে সরকারিভাবে আমদানি করা টিসিবির প্রথম চালানে ৭২৮ টন পেঁয়াজ এসেছিল বন্দরে। তুরস্ক থেকে ৪০ ফুট লম্বা ২৮টি রেফার (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত) কনটেইনারে এসব পেঁয়াজ আসে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে আরও পেঁয়াজ আসবে টিসিবির। এর বাইরে পাঁচটি শিল্পগ্রুপ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার টন পেঁয়াজ বুঝে নিয়েছি আমরা। যেগুলো টিসিবির প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রামে এখন ১৫টি ট্রাকে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা করে। প্রতি ট্রাকে দেওয়া হচ্ছে দুই থেকে আড়াই টন।
>> পেঁয়াজ এলো চট্টগ্রাম বন্দরে
>> টিসিবির প্রথম চালানের ৭২৮ টন পেঁয়াজ এলো বন্দরে
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
এআর/টিসি