ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিকৃত মানসিকতার মাদ্রাসা শিক্ষক নাছির ধরা, আদালতে স্বীকারোক্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
বিকৃত মানসিকতার মাদ্রাসা শিক্ষক নাছির ধরা, আদালতে স্বীকারোক্তি

চট্টগ্রাম: রাঙ্গুনিয়ার আহমদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। পেশা শিক্ষকতা হলেও নেশা তার ভিন্ন।

ছোট ছেলে শিশুদের প্রতি প্রবলভাবে যৌনাসক্ত তিনি। বিকৃত এই যৌন কামনা চরিতার্থের ক্ষেত্রেও আবার অদ্ভুত নিয়ম তার।

এক শিশু দিয়ে টানা একাধিক রাত তৃপ্তি খুঁজে পান না। প্রতি রাতের জন্যই চাই তার নতুন মুখ, ভিন্ন ভিন্ন শিশু। বিকৃত রুচির এই বলাৎকারকারী শিক্ষকতার মহান পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকার করে আসছেন মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশুনা করতে আসা কমবয়সী শিশুদেরকে।  

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ‍সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে দেওয়া মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য। আদালতের কাছে অকপটে শিকারও করেছেন তার দীর্ঘদিনের অপকর্মের কথা।  

বলাৎকারের শিকার চারজন শিশু আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তাদের ওপর নাছিরের নৃশংস নির্যাতনের বর্ণনা দেয়।

পুুলিশ জানিয়েছে, মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন কোন দিন কোন শিশুছাত্রকে তার নৈশ মনোরঞ্জনে হাজির হতে হবে, তা রীতিমতো রুটিনের মতো করে ঠিক করে রেখেছিলেন। কোন ছাত্র রাজি না হলে বা প্রতিবাদ করলেই তার ওপর নেমে আসতো নাছিরের নির্যাতনের খড়গ। নানা অজুহাতে ক্রমাগত মারপিটের শিকার হবার পর বাধ্য হয়েই তার শয্যাসঙ্গী হতে রাজি হয়ে যেত কোমলমতি শিশুরা।  

জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলাধীন ছোট বেউলা নিবাসী নুরুল ইসলামের ছেলে নাছির বছর দুয়েক আগে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া এলাকায় অবস্থিত মাদ্রাসার শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। তার সন্দেহজনক চরিত্র সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে কানাঘুষা থাকলেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না থাকায় প্রশাসনের তরফে কিছু করা সম্ভব হচ্ছিলো না।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানকে বলাৎকার করার বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তৎপর হয়। রাতেই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশুর মা বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আলেম বানানোর উদ্দেশ্যে ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। গার্মেন্টসে চাকরি করে বহু কষ্টে ছেলের পড়ালেখার খরচ দেই। কিন্তু মানুষ রূপী এই শয়তান আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।

সহকারী পুলিশ সুপার  মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানকে বলাৎকার করার বিষয়ে নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা করেন। মামলার খবর জানতে পেরে অভিযুক্ত বলাৎকারকারী নাছির পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তার আগেই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।  

মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার নাছির উদ্দিনকে আদালতে পাঠানো হলে শিশুদের বলাৎকারের বিষয়টি স্বীকার করেন। বিকৃত রুচির এই বলাৎকারকারী শিক্ষকতার পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকার করে আসছেন মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশুনা করতে আসা কমবয়সী শিশুদেরকে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
এসকে/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।