ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘শিক্ষিত জনশক্তিকে কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২০
‘শিক্ষিত জনশক্তিকে কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি’ ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেছেন, দেশের শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষিত জনশক্তিকে কাজে লাগানোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং ভিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটি এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় শিক্ষিত ছেলেরা বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পাবে।   

রাউজানের কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেলারেল অব্ বাংলাদেশের (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিলনমেলায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) নিজাম উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। বক্তব্য দেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দা খুরশিদা বেগম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া।

কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির মিলনমেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী এবং সমিতির সভাপতি বিশ্বজিত ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় স্বাগত দেন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব সাইফুল্লাহ আনছারী। বক্তব্য দেন কদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তসলিম উদ্দিন চৌধুরী, প্রাক্তন ছাত্র সমিতির উপদেষ্টা সদস্য এস এম ইউসুফ, উরকিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার সোহেল, প্রাক্তন ছাত্র সমিতির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ নজমুল হক, মোবারক শাহ চৌধুরী প্রমুখ।

সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাউজানে অনেক গর্বিত সন্তান আছেন। কোথাও গেলে এসব গর্বিত সন্তানদের নাম শুনলে বুক ভরে যায়। এতে করে রাউজানবাসী সম্মানিত হচ্ছে, সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীও। এ অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করে ভিশন নির্ধারণ করে পরিকল্পনা করতে হবে। ’ 

প্রধান অতিথি বলেন, ‘আমাদের দেশের মেধাবী সন্তানরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বিদেশ চলে যাচ্ছে। অথবা কেউ বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে সেখানেই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? কেন আমরা আমাদের মেধাবী সন্তানদের ধরে রাখতে পারছি না? আমি মনে করি, আমাদের দেশের মেধাবীদের ধরে রাখার মত কোনো ভিশন নেই বলে এমনটি হচ্ছে। অথচ চীন, ভিয়েতনামে এমনটি মোটেও হয় না। আর মালয়েশিয়ায় এ ব্যাপারে একটি প্রকল্পও আছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদেরও ভাবার সময় এসেছে। ’

ছবি: সোহেল সরওয়ারএবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি। সেখানেও নীতিগত পরিকল্পনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে। ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড ট্রেন চালুর জন্য দাপ্তরিক প্রয়োজনীয় কাজ শেষ হয়েছে। আগামী চার বছরের মধ্যে এটি চালুর আশা রাখছি। এটি চালু হলে মানুষ দুই ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত  করতে পারবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে চুয়েট হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত রেল লাইন চালুর জন্যও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ’

তিনি বলেন, ‘রাউজানে বর্তমানে ২৭ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান। আগামীতে আমার স্বপ্ন একটি শিল্প নগর গড়ে তোলা। যেখানে অন্তত ৫০ থেকে ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আরেকটি বড় স্বপ্ন হলো রাউজানে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। এ দুটি স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে আমি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ’

এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবছর ৮ লাখ কর্মক্ষম মানুষ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তাদের চাকরি দেওয়ার মত ব্যবস্থা আমাদের নেই। আবার চাকরি খুঁজতে খুঁজতেও অনেকের নির্দিষ্ট বয়স শেষ হয়ে যায়। বিষয়টি দুঃখের। তাই আমরা নানাভাবে চেষ্টা করে চাকরিতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি করেছি। ’  

তিনি বলেন, ‘যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং অ্যাকাডেমিক জ্ঞান ভালো, তাকে সে কাজে ব্যবহার করাই উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের চাকরির ক্ষেত্রে এটি প্রায় অনুসরণ হয় না। ফলে এক সচিব একটি মন্ত্রণালয়ের নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার পরই অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে যান। নতুন সচিব আসলে তাকে আবারো সবকিছু নতুন করে শিখতে হয়। অথচ উন্নত বিশ্বে এমনটি হয় না। আমি বিদেশের অনেককেই জিজ্ঞেস করেছি তাদের উন্নয়নের পেছনের কারণ কি? তারা অকপটেই বলেছেন, তাদের মধ্যে যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে সে কাজেই নিয়োগ দেওয়া হয়। ’

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘মানুষের জীবনে কিছু কিছু প্রেরণামূলক বক্তব্য দরকার হয়। আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যও একটা প্রেরণামূলক বক্তব্য বলে আমি মনে করি। এখানে জনগণের কল্যাণে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা আছে, সাধারণ মানুষের কথাও আছে। আবার সরকারি চাকরিজীবীদের সীমাবদ্ধতা, চাকরি মেয়াদকাল এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কাজ না করানোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও বললেন। সব মিলে একটা অনুপ্রেরণা অনুভব করছি। ’

ছবি: সোহেল সরওয়ারতিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী আছে। কিন্তু নানা ধরণের প্রলোভনের শিকার হয়েও অনেককে বাধ্য হয়ে প্রতিবন্ধীতা বরণ করতে হচ্ছে। কুশিক্ষা, অপশিক্ষা ও প্রতারণার শিকার হয়েও অনেকে প্রতিবন্ধী হচ্ছে। এর প্রতিবন্ধীতায় কেবল ব্যক্তি না, জাতি এবং দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ’

বিশেষ অতিথি ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা অনুষ্ঠান বড় পরিসরে হলে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব থাকে। সাবেক সফল শিক্ষার্থীদের দেখে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণ পাবে। বিষয়টি আমি অনেক বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও দেখেছি। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মিলনমেলায় এটি প্রযোজ্য বলে আমি মনে করি। ’

তিনি বলেন, ‘রাউজানের সংসদ সদস্য এলাকার উন্নয়নের জন্য যা করেছেন তা দেখার বিষয়। ওনার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক ও উন্নয়নধর্মী বলে তিনি তা করতে পেরেছেন। একই সঙ্গে তার চিন্তা চেতনা এবং একাগ্রতার কারণে উন্নয়ন কাজের জন্য তিনি ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় ফান্ড সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এটি সাধুবাদ পাওয়ার বিষয়। তাই আমি বলব, আগামীতে সমগ্র চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনে একটি লবিস্ট গ্রুপ তৈরি করা যায়। যারা ঢাকায় বসে চট্টগ্রামের উন্নয়ন বরাদ্দে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে মনিটরিং করবেন। ’

রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘রাউজানের উন্নয়ন আজ দেশের জন্য একটি উদহারণ। ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলেই যে এলাকার জন্য কিছু করা যায়, তৃণমূলের একটি উপজেলাকে আমূল পরিবর্তন করা যায়, আজকের রাউজানই তার প্রকৃষ্ট উদহারণ। ’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘হালদা নদীকে জাতীয় ঐতিহ্য ঘোষণার প্রস্তাব দিতে ২০০৯ সালে আমি আজকের প্রধান অতিথির কাছে আবেদন করি। তখন তিনি মৎস্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাব দেন। আজ প্রায় ১১ বছর পর সেটি বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। এটি হালদা নদী এবং চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি বড় অর্জন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২০

জেইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।