পরীক্ষার সময় অন্য শিক্ষার্থীরা যখন পড়ালেখায় ব্যস্ত, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা তখন হন্য হয়ে খোঁজেন একজন শ্রুতিলেখক। পরীক্ষার প্রস্তুতির চেয়ে একজন শ্রুতিলেখকের গুরুত্ব বেশি তাদের কাছে।
তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর হাত ধরে দূর হতে যাচ্ছে প্রতিবন্ধীদের এই দুশ্চিন্তার।
চবি’র ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসরুর ইশরাকের আহ্বানে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করছেন একদল স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী। তারা নিজেদের সংগঠনের নাম দিয়েছেন ‘থার্ড আই’।
সংগঠনটির স্লোগান ‘শেয়ার ইউর রেসপনসেবলিটি’। এখন পর্যন্ত ৬০ জন প্রতিবন্ধীকে নিয়মিত সহযোগিতা করছে এ সংগঠন। যেকোনো শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সংগঠনটিতে কাজ করতে পারেন।
সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর ২৮তম আন্তর্জাতিক এবং ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসে সংগঠনটি চালু করেছে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পাঠ্যপুস্তক রেকর্ডিং, গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের ডক ফাইল এবং পরীক্ষার সময় শ্রুতিলেখক পাওয়া যাবে এ ওয়েবসাইটে।
থার্ড আইয়ের এমন উদ্যোগে সুফলও পাচ্ছেন চবির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে নানা ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয়। তবে ক্লাসের রেকর্ডিং সংগ্রহ, পরীক্ষার সময় শ্রুতিলেখকের ব্যবস্থা করাসহ থার্ড আইয়ের নানা উদ্যোগের কারণে এখন কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত থাকি।
চবি প্রতিবন্ধী ছাত্রসমাজের সভাপতি সাজ্জাদ হোসাইন সাজু বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পড়াশোনা করছেন। তবে তাদের পড়াশোনায় সহায়তা করতে কেউ এগিয়ে আসেননি। থার্ড আই সংগঠনেই প্রথম আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী হয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য তাদের এ কার্যক্রম আমাদেরকে সত্যিই উদ্বুদ্ধ করেছে।
থার্ড আই সংগঠনের আহ্বায়ক মাশরুর ইশরাক বলেন, প্রথম বর্ষে কিছু প্রতিবন্ধী সহপাঠীকে পরীক্ষার আগমুহূর্তে শ্রুতি লেখক খুঁজে পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে দেখেছি। এছাড়া পরীক্ষার নোট সংগ্রহ, রেকর্ডিং এসবের জন্য তারা অনেক চিন্তিত থাকেন।
‘আমি তখন প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নিই। এরপর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সমস্যাগুলো নিয়ে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজে লিখতে শুরু করি। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাড়া পেয়ে আমরা প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা করতে কাজে নেমে পড়ি। ’
মাসরুর ইশরাক নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, ২০২০ সালে আমরা আটটি নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করবো। যার মধ্যে রয়েছে- প্রতিবন্ধীদের কম্পিউটার ট্রেনিং, ব্রেইল ট্রেনিং, ডিবেট ওয়ার্কশপ, কর্পোরেট গ্রুমিং, ক্যারিয়ার প্লানিং এবং ইংলিশ স্পিকিং কোর্স।
তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে। বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব মেধাবী প্রতিবন্ধীরা পড়াশোনা করছেন, তারা যেন নিশ্চিন্তে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
এমএ/এসি/টিসি