রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া, জাল ব্যালট পেপার ছাপানোসহ নির্বাচনকেন্দ্রীক নানা বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে ‘ফলস পজিশনে’ যাতে আমরা না পড়ি।
বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) বিভাগীয় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দিন:
মো. আবদুল মান্নান বলেন, কয়েকজন রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, বিদেশী নাম্বার থেকে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যেহেতু পুলিশের, তাই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের আসনগুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরেও যেহেতু এ আসনগুলোতে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা ঠিকভাবে পালন করতে চাই। এ কঠিন দায়িত্ব পালন করার সময় আমারও নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। আশা করি, চট্টগ্রাম মেট্রাপলিটন পুলিশ নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। এ কদিন চলা-ফেরার সময় নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকতে চাই আমি।
পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়:
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ৩০ তারিখের নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশের সন্ত্রাসী বাহিনী তৎপর হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধনে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারাও চলছে। নির্বাচনের আগে পরে ‘টার্গেট কিলিং’ হওয়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সেনাবাহিনী প্রয়োজনে মুভ করবে:
মো. আবদুল মান্নান বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের সুপ্রিম ফোর্সেস অফ দ্যা স্ট্যাট। তাদের মর্যাদার জায়গায় রেখেই নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করাতে চাই। সেনাবাহিনীকে যত্রতত্র ব্যবহার করাতে আমরা চাই না।
তিনি বলেন, চিফ আর্মি স্টাফের সঙ্গে আমি নিজে কথা বলেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, প্রয়োজন হলেই ফোর্স পাঠাবেন। প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী সব যায়গায় সহজে মুভ করবে।
জাল ব্যালট পেপার ছাপানো অ্যালার্মিং:
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, কক্সবাজারের একজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছেন সেখানে একটি পক্ষ জাল ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে। নির্বাচনে একজন ভোটার যদি তার আসল ব্যালট পেপারের সঙ্গে অন্তত ৩টি জাল ব্যালট পেপার বক্সে ঢুকিয়ে দেয়, গণনার সময় সেটা ধরতে পারাটা খুব কঠিন। এরকম হয়ে থাকলে এটা আমাদের জন্য অ্যালার্মিং।
নিরাপত্তা জোরদার করা হবে:
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, গাড়ি রিকুইজিশনসহ যাবতীয় কাজ প্রায় শেষের দিকে। সবার সমন্বয়ে একটি শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা উপহার দিতে চাই।
তিনি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা যদি অপ্রতুল হয়ে থাকে, সেটা আরও জোরদার করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজকে থেকে প্রয়োজন হলে আজকে থেকেই নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
হুমকি দেওয়া সন্ত্রাসীদের কৌশল:
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ বলেন, ছোট-খাট কিছু ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি এখনও আমাদের কন্ট্রোলে আছে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে প্রস্তুতি তাতে সামনের দিনেও পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেই আশা করছি।
তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া সন্ত্রাসীদের স্ট্রাটেজি। হুমকি দিয়ে, মেসেজ দিয়ে বা অন্য যেকোনো ভাবে আমাদের মনোবল দুর্বল করে দেওয়াই তাদের টার্গেট। আমরা প্রশাসনে যারা আছি, তাদের মনোবল যদি দুর্বল করে দেওয়া যায়, তাহেল তারা এ মিশনে কিছুটা সাকসেস হবে। এ জন্য মনোবল হারানো যাবে না। প্রয়োজনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদেরকে সব ধরনের নিরাপত্তা পুলিশ দেবে।
সভায় সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব, আনসার, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
এমআর/টিসি