ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ

চট্টগ্রামের ৮ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৮
চট্টগ্রামের ৮ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী মোশাররফ হোসেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, এম এ সালাম, ড. হাছান মাহমুদ, মনজুর আলম, এবিএম ফজলে করিম, সামশুল হক, মহিবুল হাসান।

চট্টগ্রাম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীকে অংশ নিতে ২২৫ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে ৮ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।

যারা ইতিমধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও কয়েকটি আসনে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীর আধিক্য রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয় থেকে নির্ধারিত সময়ে (০৯ নভেম্বর-১৩ নভেম্বর) নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে ২২৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে ০৯ জন, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে ২৫ জন, চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসন থেকে ১৩ জন, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসন থেকে ১৭ জন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসন থেকে ১১ জন, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসন থেকে ০৪ জন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে ০৪ জন, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসন থেকে ১৭ জন, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসন থেকে ২৬ জন, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসন থেকে ১৫ জন, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন থেকে ১৭ জন, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে ০৯ জন, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসন থেকে ০৪ জন, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসন থেকে ২৩ জন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন থেকে ১৮ জন এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে ১৩ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন কাজ করায় দলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এ কারণে আওয়ামী লীগ থেকে রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন, জরিপ এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে নৌকার প্রার্থী মনোনীত করবেন। এ জন্য বুধবার (১৪ নভেম্বর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথাও বলবেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করি দলের জন্য যারা দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন তারাই মনোনয়ন পাবেন।

এদিকে, চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৮ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হেভিওয়েট প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে-

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন অন্যতম।

যিনি ১৯৭০ সালে সর্বপ্রথম তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত এম এ সালাম।

যিনি ১৯৯২ সাল থেকে দক্ষতা ও দূরদর্শীতার সঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও এম এ সালাম ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রায় ৬ বছর চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এবং ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে সুনামের সঙ্গে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী।

যিনি পরপর ৩ বার (২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে একাধারে উন্নয়নকাজের মাধ্যমে রাউজান উপজেলাকে পিংক সিটিতে রূপান্তর করছেন। এছাড়া এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য হিসেবে রেলপথ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ।

যিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছাড়াও সুনামের সঙ্গে সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন ড. হাছান মাহমুদ।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

যিনি ২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দলের আস্থা অর্জন করেছেন। এছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন নওফেল। পাশাপাশি চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে হিসেবে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের কাছে প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন।

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এম মনজুর আলম।

যিনি ১৯৯৪ সাল থেকে টানা ১৬ বছর প্রয়াত চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও একাধিকবার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেন মনজুর আলম।

পরবর্তীতে ২০১০ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে  তিনবারের সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে এম মনজুর আলম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০১৫ সালে পুনরায় বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে চসিকের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। যদিও ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।

এরপর থেকে নগরের ডবলমুরিং আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে সামাজিক কর্মকাণ্ড ও আওয়ামী লীগের বিশেষ দিনে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

এছাড়াও মনজুর আলম আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করে দীর্ঘদিন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়ের নামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা ফাউন্ডেশন ও মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন গঠন করে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সামশুল হক চৌধুরী।

যিনি ২০০৮ সাল থেকে টানা ২ বার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি পটিয়ার প্রত্যেক ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যেক সেক্টরে উন্নয়নকাজ হয়েছে। এছাড়াও সামশুল হক চৌধুরী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

যিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে। ২০১২ সালে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু মারা গেলে আনোয়ারা আসনের উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। পরবর্তীতে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

এরপর থেকে আনোয়ারায় পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে উন্নয়নকাজ করে যাচ্ছেন।

সার্বিক বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনে ২২৫ জন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে অনেকে নিজেকে জাহির করার জন্যও ফরম নিয়েছেন। কিন্তু মূলত প্রতি আসনে ৩ থেকে ৪ জন আওয়ামী লীগের প্রকৃত মনোনয়ন প্রত্যাশী। ’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রামের-১৬ সংসদীয় আসনে যাদের মনোনয়ন দেবেন, তাদের জয়ী করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। ’

এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে বলেও জানান আ জ ম নাছির উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৮
এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।