ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পেশাদার প্রতারক, আছে বেতনধারী পিএস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৮
পেশাদার প্রতারক, আছে বেতনধারী পিএস ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম: এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের লেকচারার পরিচয়ে নিয়েছেন বাসা ভাড়া।  চুয়েট থেকে প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর এবং আরবিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান পরিচয়ে অভিজাত পরিবারের এক তরুণীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায়। ফেসবুকে ব্লাড ডোনার গ্রুপ খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন টাকাপয়সা।  কলেজের গণ্ডি পেরুতে না পারা এই ব্যক্তির আসলে দৃশ্যমান কোন পেশাই নেই।

এই প্রতারকের নাম রিয়াদ বিন সেলিম (৩৫)। মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে একজন ব্যক্তিগত সহকারীও (পিএস) রেখেছেন রিয়াদ।

সোমবার (০১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রিয়াদ ও তার পিএস সেলিমকে নগরীর ‍বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে আটক করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

অভিজাত পরিবারের তরুণীকে নিয়ে পালানোর পর নগরীর আকবর শাহ থানায় সম্প্রতি একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের হয়।

এর ভিত্তিতে রিয়াদকে আটকের কথা জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) পলাশ কান্তি নাথ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তরুণীর বাসার গৃহকর্মী ক্যান্সারে আক্রান্ত।   তার জন্য রক্ত খুঁজতে গিয়ে ফেসবুকে রিয়াদের খোলা ব্লাড ডোনারস ক্লাবের সন্ধান পান ওই তরুণী।   রিয়াদ নিজেকে চুয়েট থেকে এমএসসি পাস বলে পরিচয় দেয়।   কিছুদিন ইপিজেডের একটি কারখানায় চাকুরির পর বর্তমানে আরবিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান পরিচয় দেয়।   বাবা এস আলম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এমন পরিচয়ও দেয়।  

‘তরুণীকে প্রলুব্ধ করার পর এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।   মাসখানেক আগে তারা পালিয়ে যায়।   তবে পরে তরুণী রিয়াদের প্রতারণা বুঝতে পেরে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।   এক পর্যায়ে আকবর শাহ থানায় একটি জিডি করা হয়। ’ বলেন পলাশ কান্তি নাথ

রিয়াদ পটিয়া পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকার মো.সেলিম উদ্দিনের ছেলে।   আটকের পর রিয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদে তার প্রতারণার বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসছে।

অভিযানে থাকা নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শিবেন বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, রিয়াদ নিজেকে বিভিন্ন সময় ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, ইউএসটিসি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান এর লেকচারার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছে।   বাস্তবে সে ইন্টারমিডিটে পাস করতে পেরেছে কি না সেটা নিয়ে আমরা সন্দিহান।  

রিয়াদ নিজেকে নিরাপদ সড়ক চাই, চট্টগ্রাম এবং পটিয়া থানা ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও পরিচয় দিত বলে জানিয়েছেন এসআই শিবেন।

অভিযানে থাকা নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রাছিব খান বাংলানিউজকে বলেন, যে তরুণীকে নিয়ে রিয়াদ পালিয়েছিল তার কয়েকজন বান্ধবীর কাছে নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে তাদের চাকরি দেবে বলে টাকাপয়সা ‍হাতিয়ে নিয়েছিল।   এছাড়া মোবাইলে সে একটি সফটঅয়্যার ডাউনলোড করেছিল যেটি চালু করলে পুলিশের অয়্যারলেসের আওয়াজ আসে।   এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়।   বাকলিয়ার মোস্তফাবাগ আবাসিক এলাকায় রিয়াদের বাবার বাসা। তরুণীকে নিয়ে কল্পলোক আবাসিক এলাকায় নিজেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের লেকচারার পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছিল।  

এডিসি পলাশ কান্তি নাথ বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি রিয়াদের বাবা একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকুরি করেন। রিয়াদ ফ্ল্যাট ও গাড়ি বিক্রির মধ্যস্থতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিবাণিজ্য, গ্যাসের ঠিকাদারি ব্যবসার নামেও অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।   এছাড়া আরবিএস গ্রুপের নামে খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্যও আমরা পেয়েছি।

‘ফেসবুকে ব্লাড ডোনার গ্রুপ ছিল তার প্রতারণার মূল হাতিয়ার।   রক্ত সংগ্রহ করে দিয়ে কিংবা রক্তদাতার কাছ থেকে রোগীর চিকিৎসার কথা বলে টাকা নিত।   মৃত ব্যক্তির দাফনের কথা বলেও টাকা নিত।   ইমাম হাসান রিংকু নামে এক যুবককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিকাশের মাধ্যমে সম্প্রতি ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ’ বলেন পলাশ কান্তি নাথ

ফেসবুকে রিয়াদের প্রোফাইল ছবিতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনামের ছবিও আছে।   আর বিএনপির পতাকা হচ্ছে রিয়াদের কাভার ফটো।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।