ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাতের চট্টগ্রাম

‘ভাই, আমার ভাইপো কি এখানে আছে ?’

রমেন দাশগুপ্ত ও আবদুল্লাহ আল মামুন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৫
‘ভাই, আমার ভাইপো কি এখানে আছে ?’ ছবি: সোহেল সরওয়ার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ঘড়ির কাঁটা রাত আড়াইটার ঘর ছুঁই ছুঁই। নগরীর কোতয়ালি থানার সামনে শত শত মানুষের জটলা।

কারও হাতে ফলমূল, ভাতের প্যাকেট, কারও হাতে পানির বোতল। একজন এসে ফটকে থাকা কনস্টেবলের কাছে কাতর কণ্ঠে জানতে চান, ‘ভাই আমার ভাইপো কি এখানে আছে ?’

সোমবার বিকেলে নগরীর নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এসময় পুলিশ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীসহ প্রায় আড়াই’শ জনকে আটক করে।

আটক হয়ে যাদের কোতয়ালি থানায় নেয়া হয়েছে গভীর রাত পর্যন্ত তারাই স্বজনদের খবর জানতে অবস্থান নিয়েছেন থানার সামনে। কনকনে শীতের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা নিয়ে শত শত মানুষ থানার সামনেই পার করছেন রাত।

থানার সামনে অবস্থান করে দেখা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বাড়ি রুবেল নামে একজনের খোঁজে এসেছেন তার চাচাত ভাই। থানার ফটকে দায়িত্বরত এক কনস্টেবলের পকেটে এক’শ টাকার একটি নোট গুঁজে দেয়ার পর তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়। ভেতরে খবর নিয়ে রুবেল হাজতে থাকার বিষয়টি তাকে নিশ্চিত করা হয়।

হন্তদন্ত হয়ে মধ্যবয়সী এক লোক বারবার ছুটে আসছেন থানার ফটকে। কনস্টেবলের কাছে গিয়ে বলেন, ‘ভাই, আমার ভাইপোর নাম আবু তাহের। আমার ভাইপো কি এখানে আছে ?’ সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষার পর রাত আড়াইটার দিকে তিনি জানতে পারেন, তার ভাইপো হাজতে আছে।

আবু তাহেরের চাচা বাংলানিউজকে জানান, তাদের বাসা হালিশহর এলাকায়। সেখান থেকে ফুটবল খেলতে আবু তাহের বিকেলে প্যারেড মাঠে আসে। টেম্পুতে করে ফিরে যাবার সময় কাজির দেউড়িতে সংঘর্ষের মুখে পড়ে যায়। এরপর পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে আসে।

আরেকজনকে দেখা গেছে হাতে একটি বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে এসেছেন আটক স্বজনকে দেয়ার জন্য। কিন্তু পুলিশ তাকে কোনভাবেই ঢুকতে দিচ্ছেনা। পরে ফটকে দায়িত্বরত কনস্টেবলের পকেটে টাকা গুঁজে দেয়ার পর তাকে ঢুকতে দেয়া হয়।

এদিকে গভীর রাতে থানায় সাংবাদিক প্রবেশের খবর পেয়ে সতর্ক হয়ে যান কোতয়ালি থানার ডিউটি অফিসারসহ দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। সাংবাদিকদের ভেতরে যেতে বাধা দেন ডিউটি অফিসার। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই এসে থানার ভেতরের গেইট ও দরজা বন্ধ করে দেন।

ফটকের সামনে দেখা হয় উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই আমজাদ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে একবার ভেতরে গিয়ে দেখা করে তিনি আপেল দিয়ে এসেছেন। আপেল খেয়েই রাত কাটাবেন আসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, এ নিয়ে তৃতীয়বার গ্রেপ্তার হয়েছেন আমার ভাই। তার হাইপ্রেশারের সমস্যা আছে। না হলে, কোন টেনশনই করতাম না।

থানা থেকে বেরিয়ে যাবার সময় রাত পৌনে ৩টার দিকে কথা হয় কোতয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিমের সঙ্গে। তিনি নিরীহ লোকজনকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেন।

ওসি বাংলানিউজকে বলেন, নিরীহ কয়েকজন আছে। পত্রিকা অফিসের চারজন পিয়নও আছে। যাচাইবাছাই করে নিরীহদের ছেড়ে দেয়া হবে।

তবে রাত পর্যন্ত মামলা দায়ের করা হয়নি জানিয়ে ওসি বলেন, মামলা দায়েরে সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট সব ধারায় অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করা হবে।

থানার ফটকের সামনে দেখা হয় কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, আসলাম চৌধুরীকে আটক করে নিয়ে যাবার পর থেকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে।

থানা ফটকের সামনে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পর এক পর্যায়ে কয়েকজন এসে চলে যাবার জন্য অনুরোধ করেন। তারা অনুনয় করে বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) থাকলে পুলিশ আমাদের সঙ্গে কথা বলছে না, খাবার দিতে চাইলেও নিচ্ছে না। আপনাদের সামনে টাকাও দিতে পারছিনা।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬,২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।