চট্টগ্রাম: ২০১৪ সালে নানা ঘটনায় বারবার আলোচনায় আসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। নতুন জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জোরদার, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সার্বিক কাজে নজরদারি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ জেলায় ইতিবাচক সাড়া ফেলে।
তবে, সমস্ত অর্জনে চুনকালি দিয়ে চলতি বছরের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল গত ১৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অদূরে আদালত পাড়ায় বস্তাভর্তি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধারের ঘটনা। এসব টাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় (এলএ) ঘুষের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠে।
ঘুষের অভিযোগ উঠার পর এল এ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। ঘটনার পর দুই ধাপে এলএ শাখার ১২ সার্ভেয়ার-কানুনগোকে বদলি আদেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার।
এরা হলেন নুর চৌধুরী, মজিবুর রহমান, শহীদুল ইসলাম মুরাদ, মো. আনোয়ার হোসেন, সুনীল কান্তি মহাজন, এস এম নাদিম, সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী, আশীষ চৌধুরী, ফেরদৌস খাঁন, আব্দুর রউফ চৌধুরী, আব্দুল কুদ্দুস ও সুশীল বিকাশ চাকমা
এছাড়াও চলতি বছরের নভেম্বরে বদলি হন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) এস এম আব্দুল কাদের।
এদিকে, টাকা উদ্ধারের ঘটনার পর পরই অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল হোসেনকে দায়িত্ব দেন জেলা প্রশাসক। তাকে পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু কয়েকদফা সময় বাড়ানোর পরও এখনো পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রতিবেদন মোটামুটি প্রস্তুত। আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যেই তা জমা দিতে পারবো।
সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সরকারি স্কুল ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবেদন জমা দিতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেবাপ্রত্যাশীসহ প্রায় ৩০ জন ব্যক্তির জবানবন্দী গ্রহণ ও গণশুনানী করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী করা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে আবুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিবেদনে আমরা এলএ শাখার আধুনিকায়ন, ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় অনিয়ম বন্ধে কিছু সুপারিশ করেছি। তদন্তের স্বার্থে প্রতিবেদন জমা না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না।
এদিকে, টাকা উদ্ধারের ঘটনার পর আটক ইলিয়াসের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরে, দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়। ইতোমধ্যে ইলিয়াসকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
সাড়া ফেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বর্তমান কর্মস্থলে যোগ দেন চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। যোগদানের পরপরই চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকে জোরদার করেন তিনি।
বছরজুড়ে ভ্রাম্যমান আদালতের উল্লেখযোগ্য অভিযানের মধ্যে ছিল নগরীর খুলশী এলাকায় দু’টি ভেজাল ওষুধ কারখানা সিলগালা, মাদারবাড়ি এলাকায় অননুমোদিত দু’টি পানি উৎপাদন কারখানা সিলগালা, বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন হারবাল ওষুধ বিক্রির প্রতিষ্ঠান বন্ধ, হাজারী গলিতে ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধ, ধূমপানে জরিমানা, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডের দায়ে একদিনে ৭১ জনকে সাজা।
জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ধূমপান, ইভটিজিং থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরেই সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। আগামীতে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
সিসি ক্যামেরা:
জেলা প্রশাসনের সার্বিক কাজের নজরদারিতে চলতি বছরের জুলাই মাসে বসানো হয় নয়টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা ক্যামেরা। তবে কিছুদিন না যেতেই আদালত পাড়ায় ৫৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটলে কেবল এলএ শাখার জন্যই নতুন করে ছয়টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়।
প্রথম ডিজিটাল ভূমি অফিস:
চলতি বছরের ১৩ ডিসেম্ব চট্টগ্রাম সদর সার্কেল ভূমি অফিসে শুরু হয় দেশের প্রথম ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম। ভূমি অফিসের এ আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘসূত্রিতা, দালালদের দৌরাত্ম্য রোধ, ব্যয় সংকোচনসহ সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪